ও ভাজা— সাদাসিধে খাওয়া ও নিয়মমত খাওয়া বলে ক্ষুধা থাকে খেয়ে তৃপ্তি হয়— ঘড়ি ঘড়ি ওষুধ খেতে হয় না। কোন রকম করে জীবনযাত্রাকে অত্যন্ত সরল করে না আন্তে পারলে জীবনে যথার্থ সুখের স্থান পাওয়া যায় না— জিনিষপত্রে গোলেমালে হাঙ্গামহুজ্জতে হিসেবপত্রেই সুখসন্তোষের সমস্ত জায়গা নিঃশেষে অধিকার করে বসে— আরামের চেষ্টাতেই আরাম নষ্ট করে দেয়। বহির্ব্যাপারের চেষ্টাকে লঘু করে দিয়ে মানসিক ব্যাপারের চেষ্টাকে কঠিন করে তোলাই মনুষ্যত্বের সাধনা। ছোটখাট ব্যাপারেই জীবনকে ভারগ্রস্ত করে ফে্ল্লে বড় বড় ব্যাপারকে ছেঁটে ফেল্তে হয়, সামান্য জিনিষেই সংসারের পথ জটিল হয়ে ওঠে এবং সকলের সঙ্গে সঙ্ঘর্ষ উপস্থিত হয়। আমার প্রাণের ভিতরটা কেবলি অহর্নিশি ফাঁকার জন্যে ব্যাকুল হয়ে আছে— সে ফাঁকা কেবল আকাশ বাতাস এবং আলোকের নয়— সংসারের ফাঁকা, আয়োজন আস্বাবের ফাঁকা— চেষ্টা চিন্তা আড়ম্বরের ফাঁকা—খাওয়া পরা আচার ব্যবহার সমস্ত সরল সংযত পরিমিত পরিচ্ছন্ন— চারিদিকে বেশ সহজ শান্ত স্বল্পতা— ড্রয়িংরুম না, ডাইনিংরুম্ না, নবাবীও না— তক্তপোষ এবং ঢালা বিছানা—শাস্তি এবং সন্তোষ— কারো সঙ্গে প্রতিযোগিতা না, বিরোধ না, স্পর্দ্ধা না— এই হলেই জীবন নিজেকে সফল করবার অবকাশ পায়। যাই নাইতে।
পাতা:চিঠিপত্র (প্রথম খণ্ড ১৯৪২)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৮
অবয়ব
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চিঠিপত্র
৫৫
[ শিলাইদহ, ১৯০১ ]
রবি