পাতা:চিত্রা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সিন্ধু পারে।
১৪৫


তীক্ষ্ণ শাণিত তীরের মতন মর্ম্মে বাজিল স্বর,—
ঘর্ম্ম বহিল ললাট বাহিয়া রোমাঞ্চ কলেবর।
ফেলি আবরণ, ত্যজিয়া শয়ন, বিরল-বসন বেশে
দুরু দুরু বুকে খুলিয়া দুয়ার বাহিরে দাঁড়ানু এসে।
দূর নদীপারে শুন্য শ্মশানে শৃগাল উঠিল ডাকি,
মাথার উপরে কেঁদে উড়ে গেল কোন্ নিশাচর পাখী।
দেখিনু দুয়ারে রমণীমুরতি অবগুণ্ঠনে ঢাকা,—
কৃষ্ণ অশ্বে বসিয়া রয়েছে, চিত্রে যেন সে আঁকা।
আরেক অশ্ব দাঁড়ায়ে রয়েছে পুচ্ছ ভুতল চুমে,
ধূম্রবরণ, যেন দেহ তার গঠিত শ্মশান ধূমে।
নড়িল না কিছু আমারে কেবল হেরিল আঁখির পাশে,
শিহরি শিহরি সর্ব্ব শরীর কঁপিয়া উঠিল ত্রাসে।
পাণ্ডু আকাশে খণ্ড চন্দ্র হিমানীর গ্লানি মাখা;
পল্লবহীন বৃদ্ধ অশথ শিহরে নগ্ন শাখা।
নীরব রমণী অঙ্গুলি তুলি দিল ইঙ্গিত করি’-
মন্ত্রমুগ্ধ অচেতন সম চড়িনু অশ্ব’ পরি।
বিদ্যুৎবেগে ছুটে যায় ঘোড়া,বারেক চাহিনু পিছে,
ঘরদ্বার মোর বাষ্প সমান, মনে হল সব মিছে।
কাতর রোদন জাগিয়া উঠিল সকল হৃদয় ব্যেপে,
কণ্ঠের কাছে সুকঠিন বলে কে তারে ধরিল চেপে।

১৯