পাতা:চিত্রা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সিন্ধু পারে।
১৪৭

মাঝে মাঝে চেয়ে দেখি রমণীর অবগুণ্ঠিত মুখে,—
নীরব নিদয় বসিয়া রয়েছে, প্রাণ কেঁপে ওঠে বুকে!
ভয়ে ভুলে যাই দেবতার নাম, মুখে কথা নাহি ফুটে;
হুহু রবে বায়ু বাজে দুই কানে ঘোড়া চলে যায় ছুটে’!


চন্দ্র যখন অস্তে নামিল তখনো রয়েছে রাতি,
পূর্ব্বদিকের অলস নয়নে মেলিছে রক্ত ভাতি।
জনহীন এক সিন্ধু পুলিনে অশ্ব খামিল আসি,—
সমুখে দাঁড়ায়ে কৃষ্ণ শৈল গুহামুখ পরকাশি’।
সাগরে না শুনি জল কলরব না গাহে উষার পাখী,
বহিল না মৃদু প্রভাত পবন বনের গন্ধ মাখি।
অশ্ব হইতে নামিল রমণী, আমিও নানি নীচে,
আঁধার-ব্যাদান গুহার মাঝারে চলিনু তাহার পিছে।
ভিতরে খোদিত উদার প্রাসাদ শিলাস্তস্ত পরে,
কনক শিকলে সোনার প্রদীপ জ্বলিতেছে থরে থরে।
ভিত্তির কায়ে পাষাণ মূর্ত্তি চিত্রিত আছে কত
অপরূপ পাখী, অপরূপ নারী, লতাপাতা নানা মত।
মাঝখানে আছে চাঁদোয়া খাটানো, মুলা ঝালরে গাঁথা,—
তারিতলে মণি-পালঙ্ক পরে অমল শয়ন পাতা।