পাতা:চিত্রা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫০
চিত্রা।

কত না দীর্ঘ আঁধার কক্ষ সভয়ে হইয়া পার
সহসা দেখিনু সমুখে কোথায় খুলে গেল এক দ্বার।
কি দেখিনু ঘরে কেমনে কহিব হয়ে যায় মনোভুল,
নানা বরণের আলোক সেথায়, নানা বরণের ফুল।
কনকে রজতে রতনে জড়িত বসন বিছানো কত!
মণি বেদিকায় কুসুম শয়ন স্বপ্ন-রচিত মত।
পাদপীঠ পরে চরণ প্রসারি’ শয়নে বসিলা বধূ–
আমি কহিলাম–“সব দেখিলাম, তোমারে দেখিনি শুধু”!


চারিদিক হতে বাজিয়া উঠিল শত কৌতুক হাসি!
শত ফোয়ারায় উছসিল যেন পরিহাস রাশি রাশি।
সুধীরে রমণী দুবাহু তুলিয়া,–অবগুণ্ঠন খানি
উঠায়ে ধরিয়া মধুর হাসিল মুখে না কহিয়া বাণী।
চকিত নয়ানে হেরি মুখপানে পড়িনু চরণ তলে–
“এখানেও তুমি জীবন দেবতা”! কহিনু নয়ন জলে!
সেই মধুমুখ, সেই মৃদুহাসি সেই সুধাভরা আঁখি–
চির দিন মোরে হাসল কাঁদাল, চির দিন দিল ফাঁকি!
খেলা করিয়াছে নিশি দিন মোর সব সুখে সব দুখে,
এ অজানাপুরে দেখা দিল পুন সেই পরিচিত মুখে!