পাতা:চীন ভ্রমণ - ইন্দুমাধব মল্লিক.pdf/১০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

৯০ চীন ভ্রমন। সকলে একত্র থাকিয়া, একত্র কাজ করিয়া, সংসার-যাত্রা নির্ব্বাহ করে। এই নৌকাতেই তাদের জন্ম, তাদের বিবাহ, বংশ বৃদ্ধি ও মৃত্যু। কত পুরুষ ধরিয়া এরূপ চলিতেছে। জমির উপর তাদের থাকবার ঠাই নাই,—দেশে এত লোকারণ্য, এত স্থানাভাব। চীন দেশে এরূপ নৌকার ঘর-বাড়ী অনেক আছে। এক হংকং সহরেই চারি লক্ষ লোকের মধ্যে বিশ হাজার লোক এইরূপ জলে বাস করে। ক্যাণ্টনে আরও অধিক। শ্যাম রাজ্যের রাজধানী বেংকক্ সহরেও এরূপ অনেক আছে এবং আমাদের ভারতবর্ষে কাশ্মীর দেশেও এরূপ অনেক দেথা যায়। এক একটী নৌকা ছেলে-পিলেয় ভর্ত্তি। তারাও মা-বাপকে সাহায্য করে। কোন স্ত্রীলোক হয়ত পিছনে হা’ল ধরিয়াছে,—তার পিঠে একটী কচি ছেলে বাঁধা। অন্যান্য ছোট বড় ছেলেমেয়েগুলি লগী ফেলে, দাঁড় বেয়ে তার সাহায্য করিতেছে। কাজে সাহায়্য হবে ব’লে সকল চীনে মাঝিই বিয়ে করে। এতে শীঘ্র শীঘ্র তাদের ছেলে পিলে হয় যে, মনে হয়, এক বছর, দেড় বছর মাত্র ছেলেমেয়েগুলি সব পিঠেপিঠি হ’য়েছে। একখানি ছোট বোটে চৌত্রিশ বৎসর বয়স্ক একটি চীনেম্যানের নয়টী সন্তান দেখিলাম। আমাকেও হারিয়েছে! অনবরত সমুদ্রের হাওয়া খেয়ে সকলেরই শরীর বেশ সুস্থ। পাছে জলে ডুবে যায়, এই আশঙ্কায় অনেক ছেলের গলায় একটা ঝুড়ির মত হালকা জিনিষ বাঁধা থাকে। জলে প’ড়ে গেলেও মাথা ভাসতে থাকবে ব’লে এরূপ করা হয়। সেইটুকু নৌকার ভিতর অনেকের রন্ধনাদি করিবারও ব্যবস্থা আছে। একটী ছোট খাঁচাতে মুর্গী বা হাঁস পোষা আছে,—তারা ডিম দেয়। অনেকে আবার ফিরিওয়ালাদের কাছ থেকে ভাত তরকারী ইত্যাদি কিনে খায়,নিজেরা রাঁধে না।