পাতা:চীন ভ্রমণ - ইন্দুমাধব মল্লিক.pdf/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হংকং।
৯৩

ছোট মেয়ে একধারে শুয়ে রয়েছে। মায়ের জন্য তার পাশেই একটু অতি অপ্রশস্ত শুইবার ঠাঁই।

 বিস্মিত হ’য়ে জিজ্ঞাসা করলাম, “তোমার স্বামী কোথা?” স্ত্রীলোকটী বলিল,—“তিনি মাস হ’ল মারা গিয়েছেন; তখন এই মেয়েটি আমার পেটে।” বল‍্তে বল‍্তে তার যেন সব অতীত কথা স্পষ্ট মনে জেগে উঠ‍্ল; গলার স্বর বাষ্প-গদগদ হ’ল। অন্ধকারে যেন এক ফোঁটা পবিত্র চক্ষুজল চোখে মুক্তার মত দেখা দিল। কি ক’রবে। উপর হইতে কেড়ে নিয়েছেন, উপায় তা নাই। তাঁরই ছোট ছোট প্রতিমূর্ত্তিগুলিকে দেখে সে কোনরূপে দিন গুজরান করে। যার শরীরে স্বাস্থ্য আছে, উচ্চ আশা ত্যাগ করিতে পারিলে তার আবার ভাবনা কিসের? জাহাজে পৌঁছিলে পর ৩০ সেণ্টের পরিবর্ত্তে আমি তাকে কিছু বেশী দিলাম। নির্ব্বাক কৃতজ্ঞতা যে কাকে বলে সেই দিন আমি প্রথম দেখলাম।

 চীন দেশে মেয়ে-পুরুষে দিন নাই রাত নাই সর্ব্বক্ষণই খাটে। কখনও কখনও বা শিশুটিকে পিঠ থেকে নামিয়ে কোলে নিয়ে মাই দেয় ও ভয়ে ভয়ে এবং সলজ্জ দৃষ্টিতে চারিদিকে চেয়ে দেখে, কেউ তার দিকে, চেয়ে দেখছে কি না। চীনেম্যানরা তাকায় না, অন্য দেশের লোকেরা তাকায়।

 চীনে বোটওয়ালীর কথা বল‍্তে গিয়ে এতখানি হইল তার কারণ, আমি চীনেম্যান সম্বন্ধে যা কিছু দেখেছি, তা আমার বড় বিস্ময়কর ব’লে মনে হয়েছে। কলিকাতা হ’তে এত পথ গিয়াছিলাম কেবল দেশে চীনেম্যান দেখব ব’লে। ব্রহ্ম ও মালয় দেশ আমার তত ভাল লাগে নাই। তাদের সম্বন্ধে বেশী কিছু জানিও না লিখিও নাই। পুঙ্খানুপুঙ্খরুপে পর্যবেক্ষণ করিয়াছি।