পাতা:চীন ভ্রমণ - ইন্দুমাধব মল্লিক.pdf/১৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হংকং।
১২৩

ভাবে চলে-কোনও রূপ ঝাঁকানি নাই। কখনও বা ঈষৎ বক্র কখনও বা অতিবক্র স্থান দিয়া উঠিবার সময় বড়ই আনন্দ বোধ হয়। নীচের দিকে তাকাইলে চক্ষুর সামনে একু অদ্ভুত দৃশ্য দেখা যায়। সহরের বড় বড় অট্টালিকাগুলি সব স্তরে স্তরে দাঁড়াইয়া। দূরে বন্দরের নীলাভ জলে শত শত জলজান ভাসিতেছে। বড় বড় অর্ণবপোতগুলি যেন ছোট ছোট মোচার খোলার মত দেখাইতেছে। তীরের চারিধারে অসংখ্য কলকারখানা হইতে কুণ্ডলীকৃত ধূমরাশি উদ্ধোৎক্ষিপ্ত হইতেছে। রেলের আসে পাশে নানা জাতীয় গাছ। সেই পাহাড়ের উপরই গোরা সৈন্যদের জন্য সেনা-নিবাস।

 উপরের ষ্টেসনটী অতি সুন্দররূপে সাজান, যেন বসিবার বৈঠকখানা। প্রতি দিন কতলোক নির্ম্মল বায়ু সেবনের জন্য এই সকল স্থানে আসে। অনেক চীনে ও ইউরোপীয় পুরুষ ও রমণী পাহাড়ের উপর বেড়াইতেছেন। কেহ কেহ বা পথশ্রান্তি নিবারণের জন্য আবরণবিশিষ্ট কাঠের বেঞ্চে বসিয়া নীচের দৃশ্য দেখিতেছিলেন। সেখানকার হাওয়া অতি শীতল ও অতিশয় নির্ম্মল, সেবন করিলে দেহে যেন নতুন প্রাণ সঞ্চার হয়। অথচ মাথায় রৌদ্রের তাপ অসহ্য বলিয়া মনে হয়। পার্ব্বত্য দেশ মাত্রই, এইরূপ। তাই বসিবার বেঞ্চের উপর আতপ নিবারণের জন্য আবরণ নির্ম্মিত।

 নীচে যেমন আফিস, দোকান, কলকারখানা,—তেমনি এই পাহাড়ের উপরই ধনী লোকের বসতি ও প্রমোদ উদ্যান। ছবির মত বাড়ীগুলির সংলগ্ন এক এক খণ্ড ফুলের বাগান ও টেনিস খেলিবার জন্য থানিকটা খালি জমি ঘেরা আছে; এক এক স্থানে এক একটি উচু মঞ্চের মত গাঁথা আছে,—সেই খানে বসিয়া বন্দরের নৈসৰ্গিক দৃশ্য দেখিয়া আরাম কয়িবার জন্য কাষ্ঠাসন পাতা।

 আমরা সাড়ে আঠার শত ফুট অর্থাৎ সর্ব্বোচ্চ স্থানে উঠিলাম।