বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:চীন ভ্রমণ - ইন্দুমাধব মল্লিক.pdf/১৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৮
চীন ভ্রমণ।

 ক্ষুধা পাইয়াছে বুঝিয়া আমি শিশুটিকে মার কোলে দিলাম, মনে করিলাম, তিনি হয়ত মাই দিবেন। তিনি কিন্তু মাই দিলেন না। এক দাসীকে দুধ আনিতে বলিলেন। শুনিলাম, উহা গরুর বা আর কোন পশুর দুধ নয়, স্ত্রীলোকেরই স্তনের দুধ গেলে ঈষৎ গরম ক’রে, ছোট হালকা লাল নীল দাগ কাটা কাঁচকড়ার বাটীতে সেই দুধ নিয়ে এল। দুধ খাওয়ার ঝিনুকটী যেন এক রকমের,—না ঝিনুক, না চামচে। তাই দিয়ে পাছে দুধ প’ড়ে জামা ভিজে যায় বলে, ছেলের গলায় শাদা রুমাল বেঁধে দুধ খাওয়াতে লাগলেন। দুধ খাওয়াবার সময় ঠিক আমাদের দেশের ছেলের মত ছেলেটী পা ছুড়ে কাঁদতে লাগল। ছেলের কাল্লা ও দুধের বার্টির শব্দ শুনে কোথা থেকে একটি পাটকিলে রঙের ঝাকড়া লোমওয়ালা মোটা সোটা চীনে বিড়াল নিমিষের মধ্যে তথায় এসে জুটলো! ছেলে ভুলাবার জন্য মা কত কি চীনে বুলি সুর ক’রে বলতে লাগলেন! বোধ হয় ব’লছিলেন,— “আয় পুসী আয়,—খোকন দুধ খাবেন। আয়! খোকন খাবেন তোরাও খাবি!” বিড়ালটাও সামনে বসে কৃতজ্ঞভাবে অনুচ্চ মধুৰ স্বরে যেন গৃহস্থদের শুভ কামনা ক’রে বলছিল,—“মা, তুই সুখে থাক, তোদের ভাত-জল খেয়েই আমরা সাত পুরুষে মানুষ হয়েছি। তুই না দিলে কে দেবে।” পরে যত খাওয়া শেষ হ’য়ে যেতে লাগলো তত আরও আগ্রহে সে ঘাড় তুলে চেঁচাতে চেঁচাতে ব’লতে লাগল,— “দেখিস্, মা অন্যমনস্ক হ’য়ে খাওয়াতে খাওয়াতে আমার কথা একেবারে ভুলে গিয়ে যেন সব দুধটুকু খাইয়ে ফেলিস না। তোর ধনেপুত্রে লক্ষ্মীলাভ হোক্, নাতিপুতি নিয়ে, পাকচুলে সিঁদুর প’রে সুখেসোয়াস্তিতে ঘৱকান্না কর্!”