করিয়া শুইয়া থাকিলে খুব আরাম বোধ হয়। খুব পাক দিলে যে কারণে বমি হয়, সামুদ্রিক পীড়াও সেইরূপ কারণে হইয়া থাকে। অনেকের মত, এরূপ অবস্থায় বমির বেগ সত্ত্বেও আহার করা উচিত। কিন্তু আমার বোধ হয়, গরম জল পান করিয়া গলায় আঙ্গুল দিয়া প্রথম বমি করিয়া ফেলাই কর্ত্তব্য; তাহাতে বিকৃত পিও ও অম্ল উঠিয়া গেলে শরীর শীঘ্র সুস্থ হয়। সামুদ্রিক পীড়া কাটিয়া যাওয়ার পর ক্ষুধা ও হজম আরও ভাল হয়, এবং শরীর আরও সুস্থ ও সবল হয়।
অনেক প্রকার যাত্রীর সহিত একত্রে থাকিতাম; তার মধ্যে কতকগুলির কথা বিশেষ করিয়া বলি। আমাদের সঙ্গে একটি জার্ম্মাণ-বালিকা ছিলেন, তিনি তাঁহার বিধবা মায়ের সঙ্গে কলিকাতা হইতে রেঙ্গুন যাইতেছিলেন। তাঁহার পিতার সম্প্রতি মৃত্যু হইয়াছে। অথচ তাঁহাদের কাহাকেও তত বিষণ্ণ দেখিলাম না। তিনি অহরহ সামুদ্রিক পীড়ায় কাতর হইতেন। ১৭।১৮ বৎসর বয়সেও তাঁহার বালিকা সুলভ চপলতা যায় নাই। সুস্থ, সবল শরীরে ও মনের আনন্দে সারাদিন তিনি জাহাজের এদিক ওদিক ছুটী ছুটি করিয়া বেড়াইতেন। কিন্তু যাই জাহাজ একটু দুলিত, অমনি তিনি কাতর হইয়া পড়িতেন,—উঠিবার বা খাইবার শক্তি থাকিত না।
একটি চীনে বালক ছিল সে কলিকাতার ডভেটন কলেজের ছাত্র। তার পিতা চীনেম্যান এবং মাতা ব্রহ্মদেশীয়া স্ত্রীলোক। তাহাকে দেখিয়া সঙ্গতিপন্ন লোকের ছেলে বলিয়া মনে হইল। বাড়ী যাইবার আনন্দে সে সারাপথই উৎফুল্ল। কিন্তু সে ও ঐরূপ জাহাজ দুলিলেই কাতর হইয়া পড়িত। নয়ত সারা দিন একটি ছোট বাঁশী বাজাইয়া দিন কাটাইত। তাহার বাঁশী ৰাজানর শিক্ষা ও অতি আশ্চর্য্য। এঞ্জিনের শব্দ ভেদ করিয়া অতি সুমধুর স্বরে সে যখন চীনে গানের, বর্ম্মা গানের, ইংরাজী গানের রাগ-রাগিণী আলাপ করিত, তখন