জাহাজের কর্ম্মচারীরা ও যাত্রীরা মুগ্ধ হইয়া তাহার সেই মধুর সঙ্গীত শুনিতে থাকিত।
আর ছিল,—একটি অনাথ ইংরেজ বালক। তাহার ১৭ বৎসর মাত্র বয়স। তাহার বিধবা মাতাকে যিনি বিবাহ করিয়াছিলেন, সেই পিতা তাহার মায়ের মৃত্যুর পরই ১৪ বৎসর বয়স হইতে তাহার সাহায্য বন্ধ করিয়া দিয়াছিলেন। সেই থেকে বালক টেলিগ্রামের কাজ করে। এত দিনে সে স্বচ্ছল পয়সার মুখ দেখিতেছে। অল্প বয়স হইতেই আপনার পথ দেখিতে হইতেছে বলিয়া তার প্রতিকার্য্যে স্বাধীনতা ও সুবিবেচনার ভাষা দেখিলাম। নিজের যৎসামান্য দ্রব্যাদি লইয়া সে আন্দামান দ্বীপে তারহীন টেলিগ্রাফের (Wireless Telegraphy) তত্ত্বাবধান করিতে যাইতেছে।
একদিন সন্ধ্যাবেলা একজন শীর্ণকায় বৃদ্ধ থালাসী জাহাজের ডেকের উপর দাঁড়াইয়া নেমাজ পড়িতেছিল। কাজ হ’তে ক্ষণেক ছুটি পেয়ে যখন সে পশ্চিম আকাশের দিকে কালিঝুলি মাখা মুখ ফিরিয়ে ভাঙ্গা ভাঙ্গা সুরে স্তুতুি গানগুলি উচ্চারণ করছিল,তার প্রতি স্বর, প্রতি মুখভঙ্গি ও অঙ্গ বিক্ষেপে এক পবিত্র তন্ময় ভাব উথলে পড়ছিল।
দ্বিতীয় দিন রাত্রে, পথে (Bessin) বেসিনের আলোক-গৃহ দেখিলাম। নিবিড় অন্ধকারের ভিতর আলোকটি দূরে ঘুরিয়া ঘুরিয়া জ্বলিতেছে। একবার পূর্ণ দীপ্তিমান, এক একবার ক্ষীণপ্রভ। অন্য সকল আলো হইতে প্রভেদ জানাইবার জন্য আলোক-গৃহের আলো এমনি ঘুরিয়া ঘুরিয়াই জ্বলে। যেন পরোপকারব্রতে ব্রতী হইয়া বিপদসঙ্কুল স্থানে দাঁড়াইয়া পথিককে পথ দেখাইতেছে।
নিকটবর্ত্তী তীরভূমি বা পাহাড় হইতে সাবধান হইবার জন্য ও গন্তব্য পথ দেখাইবার জন্য যেরূপ আলোক-গৃহ থাকে, নিমজ্জিত চূড়া হইতে সাবধান করিবার জন্যও তদ্রূপ আলোক-জাহাজ (Light