পাতা:চীন ভ্রমণ - ইন্দুমাধব মল্লিক.pdf/১৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
এময়।
১৫৫

যান পাইতে দেরি হইলে পাছে গ্রাম না দেখা হয়, এই আশঙ্কায় তাঁহার সহিত পদব্রজেই চলিলাম। যাইতে বড়ই কষ্ট হইতে লাগিল। তবে নূতন দেশে নূতন দৃশ্য দেখিতে দেখিতে যাওয়ার আনন্দে পথশ্রম মনেই হইল না। সে পাহাড়টীর গায়ে ঘাস নাই। সাদা মাটীতে বাঁধান চীনদেশের গোরস্থান চারিদিকে পরিব্যাপ্ত। নুতন পুরান অনেক গোর রহিয়াছে,—কোথাও কোনও মৃতের উদ্দেশে ফুল বা অন্য কোনও দ্রব্যের উপহার নাই। প্রতি দেহ প্রোথিত করিবার স্থানটি চারিদিকে অর্দ্ধচন্দ্রাকারে অনুচ্চ প্রাচীর দিয়ে ঘেরা।

 এইরূপ এক নুতন সমাধিস্থলের ভিতর দেখিলাম একটি রমণী বসিয়া আছেন। তাঁর সুন্দর পা'দুখানি পাদুকাহীন ও ঘন কালো চুলগুলি এলান। তাতে তাঁকে বড়ই সুন্দর দেখাচ্ছিল। মঙ্গোলয়ন জাতি এলোচুলের সৌন্দর্য্য বুঝে না। এক কাণে কুণ্ডল আছে, অপর কানে নাই। বেশ মলিন। হাতে একটি পুঁটলী, তাতে দেখিলাম,—একটি পুরুষের ব্যবহারের ছিন্ন টুপি বাঁধা। আমাদের দিকে বিস্ফারিত নেত্রে একবার মাত্র চাহিয়া পুনরায় তাঁর নিজের অন্তরের কখা নিবিষ্টচিত্তে চিন্তা করিতে লাগিলেন। তাঁর বসিবার ভাব এমন যে দেখলে হয়, এই নির্জ্জন সমাধিস্থলই তাঁর যেন বড় প্রিয় স্থান হইয়াছ। বোধ হয় কোনও অতি নিকট আত্মীয় চিরবিদায় লইয়া এই সমাধিতলে ঘুমাইতেছেন তাই তিনি ও স্থান ছাড়িতে চান না। দূর হ'তে তাঁকে দেখে প্রকৃতিস্থ ব'লে মনে হলো না। আর কল্পনার চথে অনেক কথা জেগে উঠল। কিন্তু তাড়াতাড়ি ছিল বলিয়া তখন বেশী কিছু দেখিবার বা ভাবিবার অবসর হলো না।

 তার পরদিন জনতাপূর্ণ এময়ের বাজারে বাঁশের একটি চীনে বাঁশী কিনিতেছি, এমন সময় উচ্চসুরে বামাকণ্ঠের গান শুনিয়া ফিরিয়া দেখি, সেই পাগলিনী গাহিতেছে। অপ্রশস্ত রাস্তার দুই ধারের উঁচু উঁচু বাড়িতে সেই গীত প্রতি-ধ্বনিত হয়ে কাণে যেন মধু ঢালিয়া দিতে