গরু নাই, ঘোড়া নাই, আছে কেবল, —কুকুর ও বিড়াল। সে দরিদ্র পল্লীতেও টবে করা ফুল গাছ আছে, খাঁচায় করা কেনারী পাখী আছে। জলের কিন্তু বড়ই অসদ্ভাব দেখিলাম। যেরূপ অল্প জলে তাহারা গৃহের কাজ সারিতেছে, তাহা দেখিয়া মনে হইল এ সকল স্থানে মিষ্ট জলের বড়ই টানাটানি। গৃহস্থেরা গৃহস্থও বটে, আবার দোকানীও বটে। সকলেরই এক একটী ছোটখট কারবার আছে। আবশ্যকীয় জিনিষপত্র পরস্পরের নিকট হইতে খরিদ করে। তাহাতেই সামান্য ভাবে তাহাদের দোকান চলে;—তাহাতেই অতি দীনভাবে তাহাদের দিন গুজরান হয়।
একটা ছোট বাড়ীতে দেখিলাম, অনেক স্ত্রীলোক মিলিয়া একটি রোরুদ্যমান শিশুকে লইয়া গোলমাল করিতেছে। শিশুটি বড়ই, কাতরস্বরে কাঁদ্চে,—কেঁদে কেঁদে অবসন্ন হ'য়েছে, আর যেন কাঁদ্তে পারচে না। ছেলেদের কান্না শুনলে আমার মন কেমন হ'য়ে যায়। মনে হয় যেন বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড কেঁদে উঠল। আমার আর পা চলিল না। সেই খানেই স্থির হইয়া দাঁড়াইয়া আমার সঙ্গীর নিকট কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করিলাম। তিনি জানিয়া বলিলেন যে, শিশুটীর মা আজ দুই দিন হলো মারা গিয়েছে। সে কাহারও কাছে থাক্চে না। আজ দুই দিন সে অনবরত কাঁদ্চে। কিছু থায় না। শিশুর কান্না শুনে পাড়া-শুদ্ধ মায়েদের আসন ট'লেছে। তাঁরা আর গৃহে স্থির থাক্তে না পেরে, আপনাদের ছেলেকে পরের কোলে দিয়ে মাতৃহীন শিশুটীকে নিজ নিজ স্তন্য-দুগ্ধ পান করার জন্য চেষ্টা কর্ছেন ছেলে ভুলবার জন্য সুর ক'রে কত কি ছড়া বল্ছেন। শিশুটা কিন্তু কাহারও মাই ধরচে না। যে শিশুর মা নাই, জগতে তার কেউ নাই; করুণার্দ্র-হৃদয় আত্মীয়-বন্ধুর শত চেষ্টাতেও তার সেই অভাব কখনই পূরণ হয় না।
সেখান থেকে ফিরে আসার পথে এময় সহরের এক প্রান্তে একটী