পাতা:চীন ভ্রমণ - ইন্দুমাধব মল্লিক.pdf/১৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
এময়।
১৮৩

সাঙ্গ হইলে গানের প্লেট‍্গুলি নরম বুরুস্ দিয়ে সযত্নে মুছে যথাস্থানে রাখছিলেন। আর অমনি গান বেজে উ'ঠছিল। তার মধ্যে অনেক গুলিই ইংরাজী গান ও কনসর্ট, কতকগুলি চীনে গানও ছিল। আমার সেইগুলিই ভাল লাগিল। ইংরজী গানগুলি সব হাঁসি তামাসার সুর, চীনে গানগুলি সব কান্নার মত। অশরীরী বাক্, সুকৌশলে কখনও কাঁদলে কখনও হাসলে। যে দেশের খবর কেউ জানে না, সেই দেশের রহস্যকথা শুনালে। আমি তন্ময় হ'য়ে সব শুন‍্তে লাগলাম।

 পূর্ব্বেই বলেছি, এ কয়দিন রাত্রিতে ভাল করিয়া ঘুম হয় নাই, তার উপর সকাল হইতে আরম্ভ করিয়া কত স্থানে যাতায়াত করিয়াছি। এক অবসন্ন শরীর, তাহাতে ওরূপ অবস্থায় সহজেই ঘুম আসে। কখন যে ঘুমাইয়া পড়েছি তা মনে নাই। সে ঘুম স্বপ্নহীন ও অতি প্রগাঢ়। অমন ঘুম অনেক দিন ঘুমাই নাই।

 এক ঘণ্টা বাদে যখন জাগলাম,—তখন দেখি, ঘুমন্ত অবস্থায় আমার গায়ে কে একখানি সুন্দর বালাপেসে ঢাকা দিয়া দিয়াছে। পাছে ঘুম ভাঙ্গে তাই এত যত্নে এত সাবধানে দেওয়া যে আমি তা, মোটেই টের পাই নাই। এইরূপে সর্ব্বাঙ্গ অতি সুন্দররূপে ঢাকা ছিল বলিয়াই অমন প্রগাঢ় ঘুম হইয়াছিল। নয়ত, অত শীতে অমন হাওয়াতে অনাবৃত অবস্থায় ঘুমাইলে, হয় ঘুমের ব্যাঘাত হইত, নহিলে শরীর অসুস্থ হইত। কে যে তীক্ষ্ণ কল্পনার বলে আমার সে সময়কার অভাব জানিয়া, আমার অজ্ঞাতে সে অভাব মোচন করিয়াছিলেন, মনে স্পষ্টই জানিতে পারিলাম বলিয়া আর অনুসন্ধান করিলাম না। যাঁহারা দুগ্ধপোষ্য শিশু মানুষ করিতে জানেন, অভাব না জানাইতে পারলেও যাঁহারা প্রকৃতিদত্ত ও তীক্ষ্ণ অনুভব শক্তি দ্বারা তাহা বুঝিয়া লইতে পারেন, কেবল তাঁহাদের দ্বারাই এরূপ কার্য্য সম্ভবে।

 ভিন্ন দেশ ভিন্ন জাতি ভিন্ন ধর্ম্ম ভাষা রীতি নীতি আচার ব্যবহার