বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:চীন ভ্রমণ - ইন্দুমাধব মল্লিক.pdf/১৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৪
চীন ভ্রমণ।

তবুও দুই দিন মাত্র কিছুক্ষণ করিয়া একত্র বাসের ফলে যে এত আত্মীয়তা জাগিতে পারে তা কখনও ভাবি নাই।  আজই আমার এখানে শেষ দিন। এই সকল অল্পদিনের বিদেশী বন্ধুদের সহিত আজই আমার শেষ দেখা। সন্ধ্যা হইয়া আসিতেছিল দেখিয়া তাঁহাদের নিকট হইতে বিদায় লইলাম। তাঁহারাও আমার সঙ্গে সঙ্গে ঘাট অবধি আসিলেন। জাহাজে পৌঁছিবার পূর্ব্বেই নৌকা হইতে আর তীরের লোক চেনা গেল না।

 পরদিন অতি প্রত্যুষে জাহাজ ছাড়িল। তখনও কিছু অন্ধকার ছিল। তখনও পশ্চিম আকাশে একটি ক্ষুদ্র নক্ষত্র জ্বলিতেছিল। তখনও চীনে নাট্যশালার ক্ষীণ, গীতিধ্বনি থামে নাই। ক্রমে সে সুর ক্ষীণ হইতে ক্ষীণতর হইল তবুও একেধারে বিলীন হলোনা। মস্তিষ্কের ভিতর ধ্বনিত হইয়া যেন অনন্ত পখে চারিদিকে ছড়াইয়া পড়িতে লাগিল। ব্রহ্মাণ্ডের অপর প্রান্তে ওই ক্ষীণ তারাটির দীপ্তি-রেখার মত; পরলোকগত প্রিয়জনের স্মৃতি-চিহ্নের মত।

 সে সময়কার চারিদিকের অবস্থা দেখিয়া ভাবুক কবি শেলীর এই কয়টি মধুর ছত্র আমার মনে হলো, —

“Music, when soft voices die,
Vibrates in the memory—
Odours, when sweet violets sicken,
five within the sense they quicken.
Rose leaves, when the rose is dead,
Are heaped forthe beloved's bed;

 অর্থাৎ—সঙ্গীত খামিয়া গেলে ও তার সুর স্মৃতিপথে বহুক্ষণ ধরিয়া ধ্বনিত হয়। ফুল শুকাইলেও তার সৌরভ ঘ্রাণেন্দ্রিয়ে লাগিয়া থাকে। পুষ্পের পরিণত অবস্থা আসিলে পাপড়ীগুলি গাছতলায় খসিয়া পড়িয়া যেন কোনও প্রিয়জনের শয্যা রচনা করে।