পাতা:চীন ভ্রমণ - ইন্দুমাধব মল্লিক.pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রেঙ্গুন।
১৭

দিকে বিচরণ করিতেছেন,— কেহ বা কোন গ্রন্থ পড়িতেছেন। মন্দিরের ভিতর প্রদীপ জ্বলিতেছে, -বিলাতী চর্ব্বির বাতিও জ্বলে। ধূপধুনার সুগন্ধ চতুর্দ্দিকে ব্যাপ্ত। সম্মুখে ফুলের তোড়া সাজান রহিয়াছে। কাঁসর-ঘণ্টার মত কোনওরূপ বাদ্য-যন্ত্র নাই। জানু পাতিয়া বসিয়া যাত্রীরা করযোড়ে ভূমিতে দণ্ডবং করিতেছে। অম্পূর্টস্বরে স্তোত্র পাঠ করিতেছে, কেহ বা আপনার কামনা জানাইতেছে। কোনরূপ চীৎকার বা গোলমাল নাই। প্রজ্বলিত দীপ হস্তে কেহ বা দেবপদে পুষ্পাঞ্জলি দিতেছে। পূজার উপকরণের মধ্যে কোনরূপ খাদ্যদ্রব্য নাই।

 মন্দিরের দ্বারদেশে বসিয়া অনেকগুলি অন্ধ স্ত্রীলোক ও পুরুষ সমস্বরে স্তোত্র গান করিতেছে। কেহ বা সপ্ত-স্বরার মত একরূপ যন্ত্রে কাটি দিয়া বাজাইতেছে ও নিজেরাই পায়ে খঞ্জনী বাজাইয়া তাল রাখিতেছে। কেহ বা সারিঙ্গার মত একরূপ যন্ত্র বাজাইয়া সেই স্তুতিগানের সহিত সুর দিতেছে। অন্ধ গায়কগুলির মুখের ভাবে যেন তন্ময়ত্ব মাখান। সামনে অনেকগুলি পয়সা জড় হইয়াছে। ইচ্ছা হয় পয়সা দাও, – পুরোহিতের জবরদস্তী বা ভিখারীর উৎপাত নাই। আমি অনেক দিন, অনেকবার, অনেকক্ষণ ধরিয়া এই মন্দিরটি দেখিয়াছি

 মন্দিরের উপর হইতে রেঙ্গুনের চারিদিকের দৃশ্য অতি মনোহর। একদিকে সহর ও দূরে ইরাবতী নদী প্রবাহিত। অপর দিকে বৃক্ষলতা-সমাবৃত অসমতল পল্লীগ্রামের সুচারু দৃশ্য। সন্ধ্যাকালে পশ্চিম আকাশ রঞ্জিত করিয়া যখন সূর্যদেব অস্ত যান, এখান হইতে সে দৃশ্য তখন বড়ই সুন্দর দেখায়।

 মন্দিরের পথেও অনেকগুলি মঠ আছে। সেখানে মুণ্ডিত-মস্তক ভিখারিণীগণ মন্দিরের দিকে মুখ ফিরাইয়া ধূলায় জানু পাতিয়া বসিয়া উপসনা করেন এবং নিবিষ্টচিত্ত বসিয়া ধর্ম্মগ্রন্থ পাঠ করেন। রেঙ্গুনে