বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:চীন ভ্রমণ - ইন্দুমাধব মল্লিক.pdf/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রেঙ্গুন।
১৯

গাছের নীচে অনেকগুলি কাষ্ঠাসনও আছে। সেখানে বসিয়া, এই সকল দৃশ্য দেখিলে মনে বিমল আনন্দ হয়। আমার কত পুরান কথা মনে পড়িতে লাগিল। মাথার উপর গাছের ডালে অতি করুণস্বরে- অতি মিষ্টভাষায় কাকগুলি কোলাহল করিতেছিল। আমাদের এদেশের মত রেঙ্গুনের কাক কর্কশকণ্ঠ নয়।

 সেই মঞ্চে বসিয়া অনেকগুলি ব্রহ্মদেশীয় স্ত্রীলোক ও পুরুষ ভাত কিনিয়া খাইতেছিল। এখানে রাঁধা ভাত বেচে ও সকলেই তাহা কিনিয়া খায়। কি ব্রহ্মদেশে, কি মালয়দেশে, কি চীন রাজ্যে, কি জাপানে-লোকেদের প্রধান খাদ্য ভাত ও মাছ। যব ও গমের সঙ্গে সম্পর্ক তাদের বড়ই কম। দুধ তারা মোটেই পছন্দ করে না।

 কলিকাতা হইতে আমাদের জাহাজে অনেক চটের থলে (Gunny Bag) ও তামাকের পাতা গিয়াছিল। বর্ম্মাচুরট প্রস্তুত করিবার জন্য তামাকের পাতাগুলি এখানে নামাইয়া দেওয়া হইল। চটের থ’লেগুলিও বন্দরে নামান হইল। জাহাজে রাশি রাশি চাউল বোঝাই হইল। মালয় ও চীনে এই সকল চাউল আমদানি হয়। পূর্ব্বেই বলিয়াছি, প্রতি বৎসর ব্রহ্মদেশ হইতে সাড়ে তেরকোটী টাকারও বেশী মূল্যের চাউল এসিয়ার বিভিন্ন দেশে, ইউরোপ ও আমেরিকায় রপ্তানী হয়। চাউলগুলি মোটা। ইউরোপ ও আমেরিকায় এই চাউল হইতে কাপড়ের মাড় ও মদ প্রস্তুত হয়; কিন্তু মালয় ও চীনদেশের ইহাই খাদ্য। ব্রহ্মের আর একটি প্রধান রপ্তানীদ্রব্য,—বাহাদুরী কাঠ (Timber)। উত্তর ব্রহ্মে স্বর্ণ ও হীরার খনি আছে। কেরোসিন তৈলের মত এক প্রকার তেলও { Burma oil) এখানে পাওয়া যায়। দেশে এত মূল্যবান্ দ্রব্যাদি সত্ত্বেও ব্রহ্মদেশ যে দরিদ্র তাহার প্রধান কারণ, ব্রহ্মবাসী পুরুষদের দারুণ আলস্য এবং বিবেচনা না করিয়া আমোদ প্রমোদে অযথা অর্থ ব্যয়। এ সকল বিষয় পর প্রবন্ধে বলিব।