বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:চীন ভ্রমণ - ইন্দুমাধব মল্লিক.pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪
চীন ভ্রমণ।

তখন উত্তর-বর্ম্মায় নূতন আবিষ্কৃত হীরার খনির কথা শুনিয়া অনেক ইংরাজ-বণিকই তাহা হস্তগত করিবার জন্য ব্যস্ত হইলেন। রাণ্ড এবং কিম্বার্লির স্বর্ণ ও হীরক খনির লোভই দক্ষিণ আফ্রিকার সাধারণ-তন্ত্র বিলুপ্ত করিবার প্রধান কারণ। দেশ লইব ইচ্ছা করিলে, কারণের আর অভাব হয় না। এই সকল সত্য মিথ্যা নানা কারণে, ১৮৮৫ খ্রীষ্টাব্দে, শেষ বর্ম্মা-যুদ্ধ ঘটে। রেঙ্গুন দখল করিতে একটী তোপের আওয়াজ করিতে হইয়াছিল, মান্দালেতে তাহাও আবশ্যক হয় নাই। বাঙ্গালা জয় করিতে যেমন সত্তর জন মাত্র পাঠান সৈন্যই পর্য্যাপ্ত হইয়াছিল, এখানেও সেইরূপ ইংরাজী-সৈন্য উপস্থিত হইবামাত্রই বর্ম্মা জয় হইল। থীব ও তাহার মহিষীকে বন্দী করিয়া মান্দ্রাজে পাঠান হইল। ইংরাজগণ সমস্ত বর্ম্মা অধিকার করিলেন। এখন এই রাজপত্ত্বিবারের অর্থাভাবে যার-পর-নাই দুরবস্থা হইতেছে।

 তারপর হইতেই ব্রহ্মদেশের শুভাশুভ ইংরাজের হস্তেই ন্যস্ত। ক্রমেই দেশের উন্নতি, লোকবৃদ্ধি, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হইতেছে। প্রথম প্রথম ভারতের রাজস্ব হইতে ব্রহ্মের শাসনব্যয়নির্ব্বাহের জন্য অর্থ যোগাইতে হইতে বটে, কিন্তু আজকাল রাজ্যের আর্থিক উন্নতি হওয়াতে, তাহা আর দিতে হয় না, বরং কিছু উদ্বৃত্ত থাকে।

 বর্ম্মা ইংরাজের হাতেই স্বাধীনতা হারাইয়াছে। মুসলমান জাতি কখনও বর্ম্মা জয় করেন নাই। তাহা হইলে বর্ম্মাতেও ভারতবর্ষের মত অবরোধপ্রথা নিশ্চয়ই প্রচলিত হইত। মুসলমান-বিজয় কিন্তু ভারতবর্ষ হইতে এই বর্ম্মা ছাড়াইয়া মালয় উপকূলে গিয়া পড়িয়াছিল। সেই কারণেই মালয়ের অধিবাসীরা মুসলমান। এই সকল দেখিয়া মনে হয়, যদিও বর্ম্মা-যুদ্ধের সময় বর্ম্মাকে নিতান্ত হীনবল দেখা গিয়াছে, কিন্তু তাহার বহু পূর্ব্বে বর্ম্মা এতটা হীনবল ছিল না।