পাতা:চীন ভ্রমণ - ইন্দুমাধব মল্লিক.pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ব্রহ্মদেশ
২৭

 এ সকল দেশের মধ্যে কোনও দেশেই বিবাহ ধর্ম্মের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত নহে, -সামাজিক চুক্তিমাত্র। ইচ্ছা করিলেই চুক্তি ভাঙ্গিয়া যায়। এ বিষয়ে স্ত্রীর স্বাধীনতা বর্ম্মা দেশে অত্যন্ত অধিক। শুনিয়াছি, কোনও কোনও স্থলে স্বামীর বালিসের নীচে পান-সুপারি গুঁজিয়া দিয়া চলিয়া যাইলেই হইল! পঞ্চায়ৎগণ বিবাহভঙ্গ-বিরোধের মীমাংসা করিয়া দেয়। স্ত্রীলোকের এত স্বাধীনতাসত্ত্বেও বর্ম্মায় বহুবিবাহ যে কিরূপে প্রচলিত হইল, তাহা বুঝা যায় না।

 বিবাহের বড় একটা বাচ বিচার নাই; যেমন সহজে হয়, তেমনি শীঘ্র ভাঙ্গিয়া যায়। স্ত্রী ও পুরুষ দুই জনে কিছুকাল একত্রে থাকিলেই বিবাহ সাব্যস্ত হইল। স্ত্রীলোকদের যার-তার সহিত থাকা চলে। স্বদেশী বিদেশী যার সঙ্গেই থাকুক না কেন, একনিষ্ঠ হইয়া থাকিলে তাহাতে সমাজে তাহদের মর্যাদার কোন ও হানি হয় না। চঞ্চলস্বভাব হইলে অবশ্য আলাহিদা কথা।

 ভূতে পাওয়া ও ভূত ঝাড়ানীয় বিশ্বাস সকল জাতিতেই আছে। প্রসবকালে বর্ম্মা দেশের স্ত্রীলোকের যন্ত্রণার আর অবধি থাকে না। কুসংস্কারপূর্ণ দেশসমূহে যেমন হইয়া থাকে, নীচ শ্রেণীর দাইদের হাতে সে সব ভার ন্যস্ত। পুরুষদের ইহাতে কোন কথা কহিবার অধিকার নাই। এ বিষয়ে পরিবর্ত্তনের স্রোত পৌছিতে দেরি লাগে। প্রসূতিকে আঁতুড় ঘরের চতুর্দ্দিকে অগ্নিবেষ্টিত করিয়া রাখা হয়। উদ্দেশ্য, গরমে থাকাও বটে, আবার ভূত তাড়ানও বটে! সে অসহ্য তাপে কি যন্ত্রণায় সময় কাটে, তা বুঝান যায় না। সাতদিন এইরূপ থাকিবার পর অষ্টম দিবসে তাহাকে ‘ভোপার বাথ’ অর্থাৎ গরম বাষ্পের ‘ভাপরা' দিবার পরেই ঠাণ্ডা জলে স্নান করান হয়। তাহাতে যে কত শিশু ও কত প্রসূতি মারা যায় তাহার ইয়ত্তা নাই। আমাদের দেশের মত এইরূপ নীচ শ্রেণীর দাইএর প্রথা বর্ম্মায় এখনও অন্ধভাবে অনুসৃত হইতেছে।