চীন দেশেও এই পরিচয় পাইয়া স্ত্রীলোকদিগকে অশেষ আনন্দ অনুভব করিতে দেখিতাম। বৃদ্ধারা স্পষ্ট কথায় জিজ্ঞাসা করিতেন, তাহাদের প্রথম প্রশ্নই এই। অল্পবয়সীরা শুনিতে চান, অথচ মুখ ফু’টে জিজ্ঞাসা করিতে পারেন না,—প্রশ্ন করিবার অবসরের জন্য অপেক্ষা করেন; অথবা অন্যের মুখ দিয়া জিজ্ঞাসা করিয়া জানিয়া লইতে চেষ্টা করেন! বিবাহ ও ছেলেপুলে হইয়াছে জানিলে যেন একদলভুক্ত মনে করেন, এবং মিশিবার সঙ্কোচ আরও কমে। ছেলেপুলের কথা শুনিলে সকল দেশের স্ত্রীলোকেরই আনন্দের সীমা থাকে না; পুরুষদের আনন্দ অতটা বেশী বলিয়া মনে হইত না। সকলেই ছোট ছেলে ভালবাসে। আমিও যখন অন্যের ছেলেকে আদর কারিতাম, তথন স্পষ্টই বুঝিতাম, তাদের মা-বাপের মনে আনন্দ উথলিয়া উঠিত।
জীর্ণ পর্ণকুটির হইতে বাহির হইয়া এক কুষ্ঠরোগাক্রান্ত মগ আমার নিকট ভিক্ষা চাহিল। তার ছেলেটিও বাপের দেখাদেখি এসে হাত পাতিল। ছোট ছোট হাতগুলি বেশ সুন্দর দেখাচ্ছিল। তার শরীরে কোনও রোগলক্ষণ নাই। কুষ্ঠীর স্ত্রীকে ও দেখিলাম। গরীব হইলেও বেশভূষা স্বামী অপেক্ষা অনেকটা পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন। আমার কাছে রৌপ্যমুদ্রা ছাড়া আর কিছু ছিল না। দিতে ইতস্ততঃ করিয়া একটি ক্ষুদ্রতম রৌপ্যমুদ্রা কুষ্ঠীর হাতে দিলাম। হিন্দীতে বলিলাম, দু’জনে ভাগ করে নিও। ছেলেটি হাতে না পেয়ে বড়ই বিষন্ন হলো। জাহাজে ফিরিয়া আসিয়াও মনে হতে লাগল, তার হাতে কিছু দিয়া আসি।
মন্দিরে এক জন স্ত্রীলোক তাঁর ছোট ছেলেটিকে জানু পাতিয়া বসিয়া উপাসনা করিতে শিখাচ্ছিলেন। আমার সে দৃশ্য বড়ই ভাল লেগেছিল। ছেলেমানুষের ভাবে ও আধ-আধ স্বরে যেমন এক স্বৰ্গীয় ভাব প্রকাশ পায়, তারও প্রত্যেক অবয়বে প্রত্যেক কার্য্যে সেইভাব পরিস্ফুট।