অট্টালিকা, বাগান, পুরোহিতের ঘর, দেবগৃহ স্তরে স্তরে উঠিয়াছে। বাগানের চারিদিকের নালায় কত পদ্মগাছ ঝরণার জলস্রোতে জন্মিয়াছে। বাগানের মধ্যে একটী উচ্চ ফোয়ারা। ঘরে পুরোহিতেরা একত্রে বসিয়া রহিয়াছে, কেহবা টেবিলে বসিয়া আহার করিতেছে। তাহাদের মস্তক মুণ্ডিত, বিনানী নাই। তাঁহারা সযত্নে আমাকে মন্দিরের সকল স্থান দেখাইলেন। তাঁহাদের ভাষা বুঝাইয়া দেয়, এমন কোন লোক ছিল না। ইঙ্গিতে যতদূর বুঝা যায়, বুঝিলাম। দেবগৃহে ভীষণাকার দেবতা বা দৈত্যের মূর্ত্তি সংস্থাপিত। মুখে ক্রোধব্যঞ্জক ভ্রূকুটি; হাতে বদ্ধমুষ্টি বা যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র; দাঁড়াইবার ভঙ্গী যেন আক্রোশপূর্ণ। সকল মূর্ত্তিরই কর্কশ ভাব। নম্র ভাবের একটী মূর্ত্তিও নাই। একটীও স্ত্রীলোকের বা বালকের মূর্ত্তি নাই। শুনিলাম পৌত্তলিক তেওস্ত ধর্ম্মোক্ত এই মূর্ত্তিগুলি চীনেম্যানদের বীর পূর্ব্ব পুরুষগণেরই মূর্ত্তি। চীনেম্যানদের বাড়ীর দেওয়ালেও এইরূপ ছবির পট দেখা যায়। যাঁহারা বিপুল পরাক্রমে চীনকে শত্রুহস্থ হইতে বাঁচাইয়াছেন, এ সকল তাঁহাদেরই প্রতিমূর্ত্তি। অধিকাংশ চীনবাসিগণ এই সকল মূর্ত্তিকেই পূজা করিয়া থাকেন। তবে মন্দিরের কোন কোন ঘরে ধ্যানমগ্ন বুদ্ধদেবেরও প্রশান্তমূর্ত্তি প্রতিষ্ঠিত দেখিলাম। চীনাবাসিগণ এই সকলকে আলো, ধূপ, ধূনাদি দিয়া পূজা করেন।
মন্দির দেখা শেষ হইলে জল-প্রপাত দেখিতে গেলাম। উচ্চ সহর হইতে চারি মাইল দূরে অবস্থিত। পর্ব্বত-পরিখা বেষ্টিত বটানিক্যাল গার্ডেন, সেই খানেই অবস্থিত। ভিতরে ঢুকিলেই জলপ্রপাতের অস্ফুটধ্বনি কাণে যায়। সকল স্থান হইতেই সে ধ্বনি শুনা যায়, কিন্তু বুঝা যায় না। মনে হয়, নির্জ্জনে কে যেন কার কাণে কাণে মিষ্ট কথা কহিতেছে। সে স্থানটী এমন যে, একটি পাখী ডাকিলে