বায়ুভরে পাল স্ফীত হইয়া যখন নীল রঙে চিত্রিত চোখ আঁকা “ড্রাগন” ঝোলান সমপানগুলি সমুদ্র আচ্ছন্ন করিয়া এদিক ওদিক ভাসিয়া বেড়ায়, দূর হইতে তখন সে দৃশ্য অতি সুন্দর দেখায়। ছোট বড় অর্ণব-পোতের তা সংখ্যাই নাই। নানা দেশের নানা রকম নিশান তুলিয়া বাণিজ্য-তরী সকল সমুদ্রে ভাসমান। এস্থানে কত রকমের বিভিন্ন জাতির যুদ্ধ-জাহাজ দেখিলাম। কেহ আসিতেছে, কেহ যাইতেছে,কেহ মাঝদরিয়ায় নঙ্গর করিয়া আছে,কেহ জেটিতে কয়লা বোঝাই লইতেছে। তাদের শিটির বিকট স্বর শুনলে যেন প্রাণ কেঁপে উঠে। ভীমদৰ্শন গোরা ও কাফরী সৈন্যগুলি ঠিক যেন যমদূতের মত দেখিতে। আর তাদের ব্যবহারও পশুর মত। রুষ-জাপান যুদ্ধের জন্যই বিভিন্ন দেশের এত রণতরী এখানে জমা হইয়াছে; আবশ্যক বুঝিলেই যুদ্ধে যোগ দিবে। “ষ্টীমলঞ্চ”গুলি তীরবেগে নিকটবর্ত্তী স্থানে যাতায়াত করিতেছে। বন্দরে ঢুকিয়া যতদূর দেখা যায়, কেবল নৌকা আর জাহাজ; তা’ছাড়া আর কিছু দেখা যায় না। কলিকাতার বন্দরের তুলনায় এ বন্দর অন্ততঃ দশগুণ বড়। সহরের প্রকাণ্ড বাড়ীগুলি সব যেন তীরে সারবন্দী হইয়া দাঁড়াইয়া আছে।
জাহাজ জেটির যতই নিকটবর্ত্তী হইতে লাগিল,ছোটছোট ডিঙ্গিতে চড়িয়া মালয় দেশের কতকগুলি কালো কালো নগ্নমূর্ত্তি লোক আসিয়া জাহাজের চারিদিকে ঘিরিল। তাদের মধ্যে ৮।৯ বৎসরের ছেলেও অনেকগুলি ছিল। আমার ইচ্ছা হ'তে লাগল, এদের কাণ ম'লে স্কুলে দিয়ে আসি। কিন্তু তা’হলে এদের আর এমন স্বাস্থা থাকত না। এরা খুব জবর ডুবুরী। জাহাজের উপর হইতে সিকি দুয়ানি জলে ফেলে দিলে এরা তৎক্ষণাৎ ডুব দিয়ে তা’ তুলে আনে। এরা মাছের মত অবলীলাক্রমে সাঁতার দিতে পারে। সমস্ত দিনই এরা ছোট ডিঙ্গীতে চ’ড়ে সমুদ্রতীরে ঘুয়ে বেড়ায়; আর জাহাজ আসিলেই