সিঙ্গাপুরে আর একটি সুন্দর দৃশ্য দেখিলাম। কালো ফিরিঙ্গীৰ পোষাক-পরা কতকগুলি মাদ্রাজী জাহাজের ধারে ধারে ছোট নৌকা করিয়া অনেক রকম প্রবাল ও নানাবিধ ছোট বড় চিত্র-বিচিত্র শামুক বেচিয়া বেড়াইতেছে। সেগুলি দেখিতে এত সুন্দর যে, মনে হয়। ঠিক যেন গজদন্ত নির্ম্মিত সাদা সাদা ফুল। এই প্রবলগুলি ক্রমবিকাশপর্য্যায়ে জেলি মাছ হইতে এক স্তর উঁচু, শুধু দেহনল নয়, ইহাদের দেহে খাদ্যনলও সংযুক্ত আছে। দামও অতি অল্প। এক ডলার দিলে নানা রকম রঙ ও আকারের এক ঝুড়ি প্রবাল পাওয়া যায়। আমি অনেকগুলি কিনিয়া আনিয়াছি ও আমার অনেক বন্ধুবান্ধবকে উপহার দিয়াছি।
সিঙ্গাপুর দ্বীপটীর উপকূলের অৰ্দ্ধেক অংশ ক্রমিক জেটী দিয়ে বাঁধান। এসকল স্থানে বাহাদুরী কাঠের অভাব নাই। বড় বড় বাহাদুরী কাঠ দিয়ে জেটী প্রস্তুত। এখানে ব্যবসা-বাণিজ্য এত বেশী যে, জাহাজ একবারে জেটীতে লাগিয়া মালপত্র নাবাইয়া না দিলে বা বোঝাই না নিলে চলে না। যতদূর চক্ষু যায়, জেটিতে সারি সারি জাহাজ বাঁধা রহিয়াছে। অতি ক্ষিপ্রতার সহিত আমাদের জাহাজ জেটীতে ভিড়ান হইল। চীনেম্যান কুলি, কুলির সরদার, কেরাণী ইত্যাদিতে জেটী পরিব্যাপ্ত। সবই চীনেম্যান। মাংসপেশী বহুল সুগঠন অর্দ্ধনগ্ন দেহে তাহারা অকাতরে ১০।১২ ঘণ্টা করিয়া খাটিয়া মাল নাবান-উঠান কাজ করিতেছে। জেটীর পাশেই বিস্তৃত আয়তন ঢেউতোলা টিনের গুদাম-ঘর। তার ভিতর হইতেই ছোট ট্টেণযোগে মালপত্র সহরের ভিতর নীত হইতেছে। তার নিকটেই পাথুরে কয়লার স্তুপ! বহুদূর ধরিয়া পর্ব্বতাকারে কয়লা রক্ষিত হইয়াছে। যেন সমুদ্রের ধারে বরাবর একটা অবিচ্ছিন্ন কয়লার পাহাড়ের সারি চলিয়া গিয়াছে। সিঙ্গাপুর জাহাজে কয়লা লইবার একটি প্রধান আড্ডা।