বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:চীন ভ্রমণ - ইন্দুমাধব মল্লিক.pdf/৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৬
চীন ভ্রমণ।

অনবরত মিশিতাম, তাঁহারা কত দেশ বেড়াইয়াছেন। তাঁহাদের মধ্যে কত ধনী সওদাগর ছিলেন। কেহ কেহ বা ভ্রমণকারী কর্ম্মচারী, বহু দিন ধরিয়া ও অঞ্চলের সকল দেশে ঘুরিতেছেন। কোন্ জিনিষের কোথায় কত দাম, কোন্ দ্রবা কোথা কত সস্তায় উৎপন্ন হইতে পারে, কিরূপ বস্তু কোথায় আবশ্যক, ইত্যাদি সংবাদ সংগ্রহ করিয়া আজীবন দেশে দেশে ফিরিতেছেন। অর্থোপার্জ্জন কি সহজে হয়? তাঁহাদের সহিত সদা সর্ব্বদা বসিয়া সেই সকল বিষয়ের ও নানা দেশের কথাবার্ত্তা হইত। তাহার মধ্যে অনেক ধনী চীনে সওদাগর ও অপর ধনী লোকও ছিলেন। চীনেরা ইউরোপীয়ানদের সহিত সমকক্ষ হয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করিতেছেন। খুব কম লোকই চাকরীর জন্য লালায়িত। তাঁহারা সবাই অল্প-বিস্তর ইংরাজী জানেন। তাঁহাদের নিকট হইতে তাঁহাদের দেশ ও তথাকার আচার-ব্যবহার সম্বন্ধে অনেক খবর পাইতাম। জাপানী,ইহুদী,পার্শী,ইউরোপীয়ান ও আমেরিকান ভদ্র স্ত্রী-পুরুষ ও অনেক ছিলেন। সুতরাং জনতাপূর্ণ সহরে থাকিলে যেমন সঙ্গীর অভাব হয় না, জাহাজেও সেইরূপ বেশ আনন্দই সময় কাটিত।

 তখন শুক্ল পক্ষ। যে দিন জাহাজ ছাড়ে, তার পর দিনই পূর্ণিমা। সন্ধ্যা ৭ টার সময় ডিনার হইত। তার পর সকলে ডেকের উপর আরাম-কেদারায় বসিয়া নির্ভাবনায় জোৎস্নাপুলকিতা শুভ্র-যামিনীর সৌন্দর্য্য দেখিতাম ও উন্মুক্ত নির্ম্মল বায়ু সেবন করিতাম। নীল সমুদ্রজলের উপর শ্বেত ফেনপুঞ্জ যেন কিশলয়ের উপর রাশীকৃত ফুলের মত মনে হইত। এখানকার লোণা জল রাত্রিতে জোনাকের মত জ্বলে। স্থির সমুদ্রে জাহাজ যখন ঈষৎ দোলে, তখন বড়ই আরাম বোধ হয়; মনে হয়, আস্তে আস্তে ঘুম পাড়াবার জন্য কে যেন কোলে করিয়া দোলাইতেছেন।

 কিন্তু সেই পূর্ণিমার নিশায় পশ্চিম আকাশে মেঘ উঠিল; বায়ুও