প্রবল বাতাস ক্রমাগত একদিক- অর্থাৎ উত্তর-পূর্ব্ব দিক হইতে বহিতে থাকে বলিয়া এরূপ তুফান হয়। এরূপ সময়ে জাহাজ উলটে যাওয়া বা ডুবে যাওয়ার কোনও ভয় নাই। প্রধান ভয়, পাছে জাহাজ ঢেউয়ে উঠিবার ও নামিবার সময় তাহার হা'ল ভাঙ্গিয়া যায়। হা'ল ঘুরিলে জাহাঞ্জের গঠিত হয়; উহা ভাঙ্গিয়া গেলে জাহাজ অনন্যেপায়। সমুদ্রে এত ঢেউ খে, তাহা আর সেস্থলে মেরামত হইবার উপায় নাই; জাহাজ ডুবিলে হালকা বোটে করিয়া পালাইবার যো নাই। সে ঢেউয়ে,যে তুফানে,সে বোটও ডুবিয়া যাইবে। জলে অসংখ্যা হাঙ্গার; মানুষ পড়িলেই গিলিয়া ফেলে। আর একটী প্রধান ভয়, চীন-সমুদ্রে বিস্তর নিমজ্জিত চড়া আছে।
গভীর সমুদ্রের জলের রঙ সাধারণত; ঘোর নীল; কিন্তু এখানে অনেক স্থানে হরিদ্রাভ; তার কারণ, জলের নীচে বালুকাময় চড়া। এই কারণেই চীন সমুদ্রের নিকটবর্ত্তী হোয়াংহো সমুদ্রের অর্থ হলদে সমুদ্র। নিমজ্জিত চড়াগুলিতে লাগিলে জাহাজ ফুটা হইয়া যায়। আমরা যখন যাইতেছিলাম তখন “ষ্ট্যানলী” নামক লগুনের কোন জাহাজ রাণ্ড খনির জন্য পাঁচ হাজার চীনে কুলি লইয়া যাইতে যাইতে ঐরূপ একটীি চড়ায় লাগিয়া ফুটা হইয়া যায়। সমুদ্রের মাঝে নিকটবর্ত্তী একটি পাহাড়ে যাত্রীগুলিকে নামাইয়া দিয়া ও মালপত্র সব সমুদ্রজলে ফেলিয়া দিয়া মেরামতের জন্য জাহাজ খানি নিকটবর্ত্তী বন্দরে চলিয়া গেল; অন্য জাহাজ আসিয়া সেই সকল লোকের প্রাণ বাঁচাইল। সে জাহাজ খানিকে ভগ্ন ও খালি অবস্থায় ফিরিবার কালে আমরা স্বচক্ষে দেখিলাম। দেখিয়া জাহাজ শুদ্ধ লোকের আতঙ্কের পরিসীমা রহিল না।
চীন সমুদ্রে আর একটা বিপদের কারণ,—“টাইফুন” নামক এক প্রকার ঘূর্ণী ঝড়। জাহাজ তাহাতে পড়িলে আর রক্ষা নাই। জাহাঙ্গ প্রবল ঘুণী বায়ুবেগে চূর্ণ বিচুর্ণ ও উর্দ্ধে উৎক্ষিপ্ত হইয়া ডুবিয়া যায়।