রঙ্গরহস্য দেখিত। তাহাতে তাঁহাদেৱ ভ্রক্ষেপও ছিল না। সময় সময় স্ত্রীলোকেরা এলোচুলে হাত ও গলাকাটা নাইটগাউন মাত্র পরিয়া ক্যাবিন হইতে ডেকের উপর আসতেন। একে খর্ব্বাকৃতি, তাহাতে লম্বা লম্বা কালো চুল পায়ের গুলফ অবধি পড়িত, চোখ ছোট ও গাল উঁচু বলিয়া হাসিলেই চোখ দুটি বুঁজিয়া গিয়া দেখিতে অতি সুন্দর হইত; সকলেরই চক্ষু সেই দিকে ছুটিত। ইহাতে তাঁহাদের কিছুমাত্র লজ্জাবোধ হইতে না। যেমন বালক-বালিকারা একত্র খেলা করে, তাঁহারাও তেমনি সরলমনে নিঃশঙ্কচিত্তে খেলা করিতেন। তাঁহাদেব এইরূপ স্বাধীন ভাবে খেলা করিতে দেখিয়া আমাদের অনেকেরই মনে কতই অযথা কুৎসিত কল্পনা আসিত।
জাহাজে আমি ছাড়া আর একটি হিন্দু পরিবার ছিল। এক ব্যবসাদার চোবে তাহার স্ত্রী ও একটি শিশু কন্যাকে লইয়া যাইতেছিল। স্ত্রীর কালো ফুল-ষ্টকিং-পরা পায়ে রূপার অলঙ্কার ছিল; ঘাগরাটি রঙ্গিন ছিটের; নাকে নখ ও কানে বড় বড় অনেকগুলি মাকড়ি। তাহারা ডেকযাত্রী। আর তাহাদের পাশেই দুই জন জাপানী ও একটি জাপানী রমণী থাকিত। সেই জাপানীদের সঙ্গে দুই এক ঘণ্টার মধ্যে চোবের স্ত্রীর এত বন্ধুত জন্মিয়া গেল যে, যদিও সে তাহদের কথা বুঞ্চিত না, তবু দিনরাত্রি জাপানীদের কাছে থাকিত। সে হিন্দিতে ও তাহারা নিজের ভায়ায় কথা কহিত। তবে ভাবে, আন্দাজে অর্থের বিনিময় হইত। কথা বুঝুক বা না বুঝুক, সর্ব্বদাই তাহাদের সঙ্গে হাসিত। জাপানীরা কলা ও গাব আনিয়াছিল, চোবের স্ত্রীকে তাহা খাইতে দিত। সে তাহা কিছুমাত্র ইতস্ততঃ না করিয়াই খাইত। চোবে নিজে কি্ন্তু কি সব ভাজাভুজি আনিয়াছিল,তাহাই খাইত। কাহারও ছোঁয়া খাইত না। কিন্তু চোবেকে দেখিতম, স্ত্রীর যেন গোলমটি!