নৌকা সাম্পানের মত নয় এবং তাহদের গঠন প্রণালীও অন্যরূপ; সাম্পান অপেক্ষা আয়তনেও অনেক বড়। সাদা সাদা একরূপ হাল্কা কাঠ দিয়া অতি নিপুণতার সহিত গঠিত ও অতি সুকৌশলে পরিচালিত। ইহার ‘ছত্রী’ আছে এবং পিছনে একটী হা’ল ও বসিয়া বসিয়া অনেকগুলি দাঁড় টানিবার ব্যবস্থা আছে। পাল উঠাইবার এবং নামাইবার ব্যবস্থা অতি সুন্দর; পালগুলি মাদুরের, ক্যাম্বিসের নয়। এত তাড়াতাড়ি ইহা চলা-ফেরা করে যে, পালের সাহায্য অনবরতই লাইতে হয়। পাল সর্ব্বদা তোলাই আছে,—তা যে দিকেই হাওয়া হোক না কেন। হাল্কা নৌকাখানি পাল ও দাঁড়ের সাহায্যে তীরের মত ছুটে। বায়ুভরে এক একবার বিষম কাৎ হয়, কিন্তু নৌকা এত হাল্কা যে, ডুবিবার কোন ভয় নাই। আর সেই সময় নৌকায় সমুদ্রের ঢেউ লাগিয়া অতি মধুর কল্-কল্ শব্দ হয়।
জাহাজ থামিবা মাত্র অতিশয় বাস্ততার সহিত শত শত নৌকা, যাত্রী নামাবার জন্য জাহাজের চারি দিকে আসিয়া ঘিরিল। চাহিয়া দেখি, প্রায় সকল নৌকাই চীনে স্ত্রীলোকের দ্বারা পরিচালিত। হা’ল ধরিয়াছে স্ত্রীলোক, দাঁড় টানিতেছে স্ত্রীলোক। এমন দৃশ্য পূর্ব্বে কখন দেখি নাই, কখন শুনিও নাহি। স্বাধীনভাবে, সানন্দচিত্তে নৌকায় দিবারাত্র বাস হেতু স্বাস্থ্যের যে এতটা প্রফুল্লতা জন্মে, তা তাদের প্রত্যেক অঙ্গে,—প্রত্যেক হাব-ভাবে জানা যায়। নীল পোষাকের উপর সাদা রঙের পূর্ণ বিকাশ—ঠিক যেন ছবির মত দেখায়। প্রাতঃকালীন সূর্য্য-রশ্মি সেই সকল মুখের উপায় পড়িয়া স্বচ্ছ সরোবরে শ্রেণীবদ্ধ প্রস্ফুটিত পদ্ম ফুলের ন্যায় দেখাইতে লাগিল। আমি যতদিন হংকং বন্দরে ছিলাম, প্রতিদিনই প্রত্যুষে ক্যাবিনের ছোট গোঁজলা দিয়ে ঐরূপ সুন্দর দৃশ্য দেখে আমার সুপ্রভাত হ’ত।
নৌকায় তারা সপরিবারে বাস করে। স্বামী, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা