আমি বাবুর দিকে ভাল করিয়া চাহিলাম। দেখিলাম, তাঁহার দেহ উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ, হৃষ্টপুষ্ট ও বলিষ্ঠ; বয়স প্রায় চল্লিশ বৎসর, তাঁহার চক্ষুদ্বয় আয়ত, ভ্রু যুগ্ম। তাঁহার পরিধানে নরুনপেড়ে শান্তিপুরের একখানি পাত লা ধুতি, একটা চুড়ীদার পিরাণ, অতি সুন্দর তসরের চাদর, পায়ে কানপুরের জুতা। কিছুক্ষণ ভাল করিয়া দেখিয়াও আমি বাবুকে চিনিতে পারিলাম না। অপ্রতিভ হইয়া সাহেবকে বলিলাম, না মহাশয়! আমি বাবুকে চিনিতে পারিতেছি না।”
সাহেব গম্ভীরভাবে বলিলেন, “ইঁইার নাম রায় পার্ব্বতীচরণ দেব—পূর্ব্ববঙ্গের একজন প্রসিদ্ধ জমীদার।”
আমি ইতিপূর্ব্বে তাঁহার নামও শুনি নাই, সাহেবকে জিজ্ঞাসা করিলাম, “এখানে থাকা হয় কোথায়?”
সাহেব ঈষৎ হাস্য করিয়া উত্তর করিলেন, “বাগবাজারে।”
আমি আগ্রহের সহিত জিজ্ঞাসা করিলাম, “এখানে আগমন কিসের জন্য?”
সাহেব বলিলেন, “বড় বিপদে পড়িয়াই উনি আমাদের এখানে আসিয়াছেন। সকল কথা ইহাঁরই মুখে শুনিতে পাইবেন।”
আমার হাতে অনেক কাজ ছিল। সাহেব আবার একটা কাজ আমার ঘাড়ে চাপাইবার যোগাড় করিতেছেন দেখিয়া, আমি আন্তরিক দুঃখিত হইলাম; এবং কাষ্ঠহাসি হাসিয়া, মাথা চুলকাইতে চুলকাইতে বলিলাম, “আমার হাতে যথেষ্ট কাজ আছে।”
সাহেব আমার মনোভাব বুঝিতে পারিলেন। হাসিতে হাসিতে উত্তর করিলেন, “তা আমি জানি। সেগুলি দুই চারিদিন দেরী হইলেও কোন ক্ষতি হইবে না। সকল কর্ম্ম ত্যাগ করিয়া, তুমি