১০১
চোখের বালি
মহেন্দ্রের মুখ দেখিয়াই আশা উৎকণ্ঠিত হইয়া উঠিল। মহেন্দ্র জোর করিয়া প্রফুল্লতা আনিবার চেষ্টা করিয়া কহিল, “একলা ছাদের উপর কোন ভাগ্যবানের ভাবনায় আছ।”
আশা নায়ক-নায়িকার কথা একেবারে ভুলিয়া গিয়া কছিল, “তোমার কি শরীর আজ ভালো নাই।”
মহেন্দ্র। শরীর বেশ আছে।
আশা। তবে তুমি মনে মনে কী-একটা ভারিতেছ, আমাকে খুলিয়া বলো।
মহেন্দ্র আশার বাটা হইতে একটা পান তুলিয়া লইয়া মুখে দিয়া কহিল, “আমি ভাবিতেছিলাম, তোমার মাসিমা বেচারা কত দিন তোমাকে দেখেন নাই। একবার হঠাৎ যদি তুমি তাহার কাছে গিয়া পড়িতে পার, তবে তিনি কত খুশিই হন।”
আশা কোনো উত্তর না করিয়া মহেন্দ্রের মূখের দিকে চাহিয়া রহিল। হঠাৎ এ কথা আবার নূতন করিয়া কেন মহেন্দ্রের মনে উদয় হইল, তাহা সে বুঝিতে পারিল না।
আশাকে চুপ করিয়া থাকিতে দেখিয়া মহেন্দ্র কহিল, “তোমার যাইতে ইচ্ছা করে না?”
এ কথার উত্তর দেওয়া কঠিন। মাসিকে দেখিবার জন্য যাইতে ইচ্ছা করে, আবার মহেন্দ্রকে ছাড়িয়া যাইতে ইচ্ছাও করে না। আশা কহিল, “কালেজের ছুটি পাইলে তুমি যখন যাইতে পারিবে, আমিও সঙ্গে যাইব।”
মহেন্দ্র। ছুটি পাইলেও যাইবার জো নাই; পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হইতে হইবে।
আশা। তবে থাক, এখন না'ই গেলাম।
মহেন্দ্র। থাক কেন। যাইতে চাহিয়াছিলে, যাও-না।
আশা। না, আমার যাইবার ইচ্ছা নাই।
মহেন্দ্র। এই সেদিন এত ইচ্ছা ছিল, হঠাৎ ইচ্ছা চলিয়া গেল?
আশা এই কথায় চুপ করিয়া চোখ নিচু করিয়া বসিয়া রহিল।
বিনোদিনীর সঙ্গে সন্ধি করিবার জন্য বাধাহীন অবসর চাহিয়া মহেন্দ্রের মন ভিতরে ভিতরে অত্যন্ত অধীর হইয়া উঠিয়াছিল। আশাকে চুপ করিয়া থাকিতে দেখিয়া তাহার একটা অকারণ রাগের সঞ্চার হইল। কহিল, “আমার উপর মনে মনে তোমার কোনো সন্দেহ জন্মিয়াছে নাকি। তাই আমাকে চোখে চোখে