অপরাধীই হইতে হয়, তবে অপরাধের যত লাঞ্ছনা তাহাই কেন ভোগ করিবে, অপরাধের যত সুখ তাহা হইতে কেন বঞ্চিত হইবে।
ঝুপ্ ঝুপ্ শব্দে দাপিয়া বৃষ্টি আসিল। বিনোদিনী তাহার ঘরে মেঝের উপর বসিয়া। সম্মুখে কাপড় স্তূপাকার। খেমি দাসী এক-একখানি কাপড় অগ্রসর করিয়া দিতেছে, আর বিনোদিনী মার্কা দিবার কালি দিয়া তাহাতে অক্ষর মুদ্রিত করিতেছে।
মহেন্দ্র কোনো সাড়া না দিয়া দরজা খুলিয়া একেবারে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিল। খেমি দাসী কাজ ফেলিয়া মাথায় কাপড় দিয়া ঘর ছাড়িয়া ছুট দিল।
বিনোদিনী কোলের কাপড় মাটিতে ফেলিয়া দিয়া বিদ্যুদবেগে উঠিয়া দাঁড়াইয়া কহিল, “যাও, আমার এ ঘর হইতে চলিয়া যাও।”
মহেন্দ্র কছিল, “কেন, কী করিয়াছি।”
বিনোদিনী। কী করিয়াছি। ভীরু কাপুরুষ! কী করিবার সাধ্য আছে তোমার! না জান ভালোবাসিতে, না জান কর্তব্য করিতে। মাঝে হইতে আমাকে কেন লোকের কাছে নষ্ট করিতেছ।
মহেন্দ্র। তোমাকে আমি ভালোবাসি নাই, এমন কথা বলিলে?
বিনোদিনী। আমি সেই কথাই বলিতেছি। লুকাচুরি, ঢাকাঢাকি, একবার এ দিক, একবার ও দিক— তোমার এই চোরের মতো প্রবৃত্তি দেখিয়া আমার ঘৃণ জন্মিয়া গেছে। আর তালো লাগে না। তুমি যাও।
মছেন্দ্র একেবারে মুহ্যমান হইয়া কহিল, “তুমি আমাকে ঘৃণা কর বিনোদ?”
বিনোদিনী। হাঁ, ঘৃণা করি।
মহেন্দ্র। এখনো প্রায়শ্চিক্ক করিবার সময় আছে বিনোদ। আমি যদি আর দ্বিধা না করি, সমস্ত পরিত্যাগ করিয়া চলিয়া যাই, তুমি আমার সঙ্গে যাইতে প্রস্তুত আছ?
বলিয়া মহেন্দ্র বিনোদিনীর দুই হাত সবলে ধরিয়া তাহাকে কাছে টানিয়া লইল। বিনোদিনী কহিল, “ছাড়ো, আমায় লাগিতেছে।”
মছেন্দ্র। তা লাগুক। বলো— তুমি আমার সঙ্গে যাইবে?
বিনোদিনী। না, যাইব না। কোনোমতেই না।
মছেন্দ্র। কেন যাইবে না! তুমিই আমাকে সর্বনাশের মুখে টানিয়া জানিয়াছ, আজ তুমি আমাকে পরিত্যাগ করিতে পারিবে না। তোমাকে যাইতেই হইবে।
বলিয়া মছেন্দ্র সুদৃঢ়বলে বিনোদিনীকে বুকের উপর টানিয়া লইল, জোর করিয়া