১৪৮
চোখের বালি
ছিল—সো নিজেকে মুহূর্তমাত্র অবসর দিত না।
সেদিন সন্ধ্যাবেলায় বাহির হইবার জো ছিল না। দুপুরবেলায় বৃষ্টি থামিয়া আবার বিকাল হইতে বর্ষণ আরম্ভ হইয়াছে। বিহারী তাহার দোতলার বড়ো ঘরে আলো জ্বালিয়া বসিয়া, বসন্তকে লইয়া নিজের নূতন প্রণালীর খেলা করিতেছিল।
“বসন্ত এ ঘরে ক’টা কড়ি আছে চট্ করিয়া বলে। না, গুনিতে পাইবে না।”
বসন্ত। কুড়িটা।
বিহারী। হার হইল—আঠারোটা।
ফস্ করিয়া খড়্খড়ি খুলিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “এ খড়্খড়িতে ক'টা পাল্লা আছে?”
বলিয়া খড় খড়ি বন্ধ করিয়া দিল। বসন্ত বলিল, “ছয়টা।”
“জিত।”
‘এই বেঞ্চিতা লম্বায় কত হইবে, এই বইটার কত ওজন’—এমনি করিয়া বিহারী বসন্তর ইন্দ্রিয়বোধের উৎকর্ষসাধন করিতেছিল, এমন সময় বেহারা আসিয়া কহিল, “বাবুজি, একঠো ঔরৎ—”
কথা শেষ করিতে না করিতে বিনোদিনী ঘরের মধ্যে আসিয়া প্রবেশ করিল।
বিহারী আশ্চর্য হইয়া কহিল, “এ কী কাণ্ড বোঠান।”
বিনোদিনী কহিল, “তোমার এখানে তোমার আত্মীয় স্ত্রীলোক কেহ নাই?”
বিহারী। আত্মীয়ও নাই, পরও নাই। পিসি আছেন দেশের বাড়িতে।
বিনোদিনী। তবে তোমার দেশের বাড়িতে আমাকে লইয়া চলো।
বিহারী। কী বলিয়া লইয়া যাইব।
বিনোদিনী। দাসী বলিয়া। আমি সেখানে ঘরের কাজ করিবে।
বিহারী। পিসি কিছু আশ্চর্য হইবেন, তিনি আমাকে দাসীর অভাব তো জানান নাই। আগে শুনি, এ সংকল্প কেন মনে উদয় হইল।—বসন্ত, যাও, শুইতে যাও।
বসন্ত চলিয়া গেল। বিনোদিনী কহিল, “বাহিরের ঘটনা শুনিয়া তুমি ভিতরের কথা কিছুই বুঝিতে পারিবে না।”
বিহারী। না’ই বুঝিলাম, নাহয় ভুলই বুঝিব, ক্ষতি কী।
বিনোদিনী। আচ্ছা, নাহয় ভুলই বুঝিয়ো। মহেন্দ্র আমাকে ভালোবাসে।
বিহারী। সে খবর তো নূতন নয়, এবং এমন খবর নয় যাহা দ্বিতীয় বার শুনিতে ইচ্ছা করে।