চোখের বালি
১৩
কল্পনা করিয়া লইলেন। ফোঁস করিয়া বলিয়া উঠিলেন, “কী গো মেজোঠাকরুন, ছেলের কাছে লাগালাগি করিতেছিলে বুঝি?”
বলিয়া উত্তরমাত্র না শুনিয়া দ্রুতবেগে চলিয়া গেলেন।
মেয়ে দেখিবার কথা মহেন্দ্র প্রায় ভুলিয়াছিল, অন্নপূর্ণা ভোলেন নাই। তিনি শ্যামবাজারে মেয়ের অভিভাবক জেঠার বাড়িতে পত্র লিখিয়া দেখিতে যাইবার দিন স্থির করিয়া পাঠাইলেন।
দিন স্থির হইয়াছে শুনিয়াই মহেন্দ্র কহিল, “এত তাড়াতাড়ি কাজটা করিলে কেন কাকী! এখনো বিহারীকে বলাই হয় নাই।”
অন্নপূর্ণ কহিলেন, “সে কি হয় মহিন। এখন, না দেখিতে গেলে তাহারা কী মনে করিবে।”
মহেন্দ্র বিহারীকে ডাকিয়া সকল কথা বলিল। কহিল,“চলো তো, পছন্দ না হইলে তো তোমার উপর জোর চলিবে না।”
বিহারী কহিল, “সে কথা বলিতে পারি না। কাকীর বোনঝিকে দেখিতে গিয়া ‘পছন্দ হইল না’ বলা আমার মুখ দিয়া আসিবে না।”
মহেন্দ্র কহিল, “সে তো উত্তম কথা।”
বিহারী কহিল, “কিন্তু তোমার পক্ষে অন্যায় কাজ হইয়াছে মহিনদা। নিজেকে হালকা রাখিয়া পরের স্কন্ধে এরূপ ভার চাপানো তোমার উচিত হয় নাই। এখন কাকীর মনে আঘাত দেওয়া আমার পক্ষে বড়োই কঠিন হইবে।”
মহেন্দ্র একটু লজ্জিত ও রুষ্ট হইয়া কহিল,“তবে কী করিতে চাও।”
বিহারী কহিল, “যখন তুমি আমার নাম করিয়া তাঁহাকে আশা দিয়াছ, তখন আমি বিবাহ করিব—দেখিতে যাইবার ভড়ং করিবার দরকার নাই।”
অন্নপূর্ণাকে বিহারী দেবীর মতো ভক্তি করিত।
অবশেষে অন্নপূর্ণা বিহারীকে নিজে ডাকিয়া কহিলেন, “সে কি হয় বাছা। না দেখিয়া বিবাহ করিবে, সে কিছুতেই হইবে না। যদি পছন্দ না হয় তবে বিবাহে সম্মতি দিতে পারিবে না, এই আমার শপথ রহিল।”
নির্ধারিত দিনে মহেন্দ্র কলেজ হইতে ফিরিয়া আসিয়া মাকে কহিল, “আমার সেই রেশমের জামা এবং ঢাকাই ধুতিটা বাহির করিয়া দাও।”
মা কহিলেন, “কেন, কোথায় যাবি।”