৫৩
মহেন্দ্র তাহার মাতার ঘরে প্রবেশ করিতে যাইতেছে, তখন আশা তাড়াতাড়ি বাহির হইয়া আসিয়া কহিল, “এখন ও ঘরে যাইয়ো না।”
মহেন্দ্র জিজ্ঞাসা করিল, “কেন।”
আশা কহিল, “ভাক্তার বলিয়াছেন, হঠাৎ মার মনে, সুখের হউক, দুঃখের হউক, একটা কোনো আঘাত লাগিলে বিপদ হইতে পারে।”
মহেন্দ্র কহিল, “আমি একবার আস্তে আস্তে তাঁহার মাথার শিয়রের কাছে গিয়া দেখিয়া আসি গে― তিনি টের পাইবেন না।”
আশা কহিল, “তিনি অল্প শব্দেই চমকিয়া উঠিতেছেন, তুমি ঘরে ঢুকিলেই তিনি টের পাইবেন।”
মহেন্দ্র। তবে, এখন তুমি কী করিতে চাও।
আশা। আগে বিহারী-ঠাকুরপো আসিয়া একবার দেখিয়া যান― তিনি যেরূপ পরামর্শ দিবেন তাহাই করিব।
বলিতে বলিতে বিহারী আসিয়া পড়িল। আশা তাহাকে ডাকিয়া পাঠাইয়াছিল।
বিহারী। বোঠান, ডাকিয়াছ? মা ভালো আছেন তো?
আশা বিহারীকে দেখিয়া যেন নির্ভর পাইল। কহিল, “তুমি যাওয়ার পর হইতে মা যেন আরো চঞ্চল হইয়া উঠিয়াছেন। প্রথম দিন তোমাকে না দেখিয়া আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘বিহারী কোথায় গেল।’ আমি বলিলাম, তিনি বিশেষ কাজে গেছেন, বৃহস্পতিবারের মধ্যে ফিরিবার কথা আছে। তাহার পর হইতে তিনি থাকিয়া থাকিয়া চমকিয়া উঠিতেছেন। মুখে কিছুই বলেন না, কিন্তু ভিতরে ভিতরে যেন কাহার অপেক্ষা করিতেছেন। কাল তোমার টেলিগ্রাম পাইয়া জানাইলাম আজ তুমি আসিবে। শুনিয়া তিনি আজ তোমার জন্য বিশেষ করিয়া খাবার আয়োজন করিতে বলিয়াছেন। তুমি যাহা যাহা ভালোবাস সমস্ত আনিতে দিয়াছেন, সম্মুখের বারান্দায় রাঁধিবার আয়োজন করাইয়াছেন, তিনি ঘর হইতে দেখাইয়া দিবেন। ডাক্তারের নিষেধ কিছুতেই শুনিলেন না। আমাকে এই খানিকক্ষণ হইল ডাকিয়া বলিয়া দিলেন, ‘বউমা, তুমি নিজের হাতে সমস্ত রাঁধিবে, আমি আজ সামনে বসাইয়া বিহারীকে খাওয়াইব।’”
শুনিয়া বিহারীর চোখ ছল্ ছল্ করিয়া আসিল। জিজ্ঞাসা করিল, “মা আছেন কেমন।”