করিল, “কাকীর কাছে যাইব।”
রাজলক্ষ্মী কহিলেন, “তোদের কোথাও যাইতে হইবে না, আমিই তোর কাকীকে আনিয়া দিতেছি।”
বলিয়া তৎক্ষণাৎ পালকি চড়িয়া অন্নপূর্ণার বাসায় গেলেন। গলায় কাপড় দিয়া জোড়হাত করিয়া কহিলেন, “প্রসন্ন হও মেজোবউ, মাপ করো।”
অন্নপূর্ণা শশব্যস্ত হইয়া রাজলক্ষ্মীর পায়ের ধুলা লইয়া কাতর স্বরে কহিলেন, “দিদি, কেন আমাকে অপরাধী করিতেছ। তুমি যেমন আজ্ঞা করিবে তাই করিব।”
রাজলক্ষ্মী কহিলেন, “তুমি চলিয়া আসিয়াছ বলিয়া আমার ছেলে-বউ ঘর ছাড়িয়া আসিতেছে।”
বলিতে বলিতে অভিমানে ক্রোধে ধিক্কারে তিনি কাঁদিয়া ফেলিলেন।
দুই জা বাড়ি ফিরিয়া আসিলেন। তখনো বৃষ্টি পড়িতেছে। অন্নপূর্ণা মহেন্দ্রের ঘরে যখন গেলেন তখন আশার রোদন শান্ত হইয়াছে, এবং মহেন্দ্র নানা কথার ছলে তাহাকে হাসাইবার চেষ্টা করিতেছে। লক্ষণ দেখিয়া বোধ হয়, বাদলার সন্ধ্যাটা সম্পূর্ণ ব্যর্থ না যাইতেও পারে।
অন্নপূর্ণা কহিলেন, “চুনি, তুই আমাকে ঘরেও থাকিতে দিবি না, অন্য কোথাও গেলেও সঙ্গে লাগিবি? আমার কি কোথাও শান্তি নাই।”
আশা অকস্মাৎ বিদ্ধ মৃগীর মতো চকিত হইয়া উঠিল।
মহেন্দ্র একান্ত বিরক্ত হইয়া কহিল, “কেন কাকী, চুনি তোমার কী করিয়াছে।”
অন্নপূর্ণা কহিলেন, “বউমানুষের এত বেহায়াপনা দেখিতে পারি না বলিয়াই চলিয়া গিয়াছিলাম, আবার শাশুড়িকে কাঁদাইয়া কেন আমাকে ধরিয়া আনিল পোড়ারমুখী।”
জীবনের কবিত্ব-অধ্যায়ে মা-খুড়ি যে এমন বিঘ্ন, তাহা মহেন্দ্র জানিত না।
পরদিন রাজলক্ষ্মী বিহারীকে ডাকাইয়া কহিলেন, “বাছা, তুমি একবার মহিনকে বলো, অনেক দিন দেশে যাই নাই, আমি বারাসতে যাইতে চাই।”
বিহারী কহিল, “অনেক দিনই যখন যান নাই তখন আর নাই গেলেন। আচ্ছা, আমি মহিনদাকে বলিয়া দেখি, কিন্তু সে যে কিছুতেই রাজী হইবে, তা বোধ হয় না।”
মহেন্দ্র কহিল, “তা জন্মস্থান দেখিতে ইচ্ছা হয় বটে। কিন্তু বেশি দিন মার সেখানে না থাকাই ভালো— বর্ষার সময় জায়গাটা ভালো নয়।”