জন্য অনুরোধ করিতেছেন, আপনাদের কথা এড়াইয়া যাওয়া আমার পক্ষে কঠিন, কিন্তু আপনারা বড়ো অন্যায় করিতেছেন।”
বলিতে বলিতে তাহার ঘনদীর্ঘ চক্ষুপল্লবের মধ্য দিয়া মোটা মোটা অশ্রুর ফোঁটা দ্রুতবেগে গড়াইয়া পড়িতে লাগিল।
বিহারী এই নীরব অজস্র অশ্রুজলে ব্যাকুল হইয়া বলিয়া উঠিল, “কয়দিন মাত্র আসিয়া আপনার গুণে আপনি সকলকে বশ করিয়া লইয়াছেন, সেইজন্যই আপনাকে কেহ ছাড়িতে চান না— কিছু মনে করিবেন না বিনোদ-বোঠান, এমন লক্ষ্মীকে কে ইচ্ছা করিয়া বিদায় করিবে।”
আশা এক কোণে ঘোমটা দিয়া বসিয়া ছিল, সে আচল তুলিয়া ঘন ঘন চোখ মুছিতে লাগিল।
ইহার পরে বিনোদিনী আর যাইবার কথা উত্থাপন করিল না।
মাঝখানের এই গোলমালটা একেবারে মুছিয়া ফেলিবার জন্য মহেন্দ্র প্রস্তাব করিল, “আসছে রবিবারে দমদমের বাগানে চড়িভাতি করিয়া আসা যাক্।”
আশা অত্যন্ত উৎসাহিত হইয়া উঠিল। বিনোদিনী কিছুতেই রাজি হইল না। মহেন্দ্র ও আশা বিনোদিনীর আপত্তিতে ভারি মুষড়িয়া গেল। তাহারা মনে করিল, আজকাল বিনোদিনী কেমন যেন দূরে সরিয়া যাইবার উপক্রম করিতেছে।
বিকালবেলায় বিহারী আসিবামাত্র বিনোদিনী কহিল, “দেখুন তো বিহারীবাবু, মহিনবাবু দমদমের বাগানে চড়িভাতি করিতে যাইবেন, আমি সঙ্গে যাইতে চাহি নাই বলিয়া আজ সকাল হইতেই দুইজনে মিলিয়া রাগ করিয়া বসিয়াছেন।”
বিহারী কহিল, “অন্যায় রাগ করেন নাই। আপনি না গেলে ইহাদের চড়িভাতিতে যে কাণ্ডটা হইবে, অতিবড়ো শক্ররও যেন তেমন না হয়।”
বিনোদিনী। চলুন-না বিহারীবাবু। আপনি যদি যান তবে আমি যাইতে রাজি আছি।
বিহারী। উত্তম কথা! কিন্তু কর্তার ইচ্ছায় কর্ম, কর্তা কী বলেন।
বিহারীর প্রতি বিনোদিনীর এই বিশেষ পক্ষপাতে কর্তা গৃহিণী উভয়েই মনে মনে ক্ষুণ্ণ হইল। বিহারীকে সঙ্গে লইবার প্রস্তাবে মহেন্দ্রের অর্ধেক উৎসাহ উড়িয়া গেল। বিহারীর উপস্থিতি বিনোদিনীর পক্ষে সকল সময়েই অপ্রিয়, এই কথাটাই বন্ধুর মনে মুদ্রিত করিয়া দিবার জন্য মহেন্দ্র ব্যস্ত— কিন্তু অতঃপর বিহারীকে আটক