পাতা:ছড়ার ছবি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

একদিন তার আদর ছিল, বয়স ছিল ষােলাে―
স্বামী মরতেই বাড়িতে বাস অসহ্য তার হল।
আর-কোনাে ঠাঁই হয়তাে পাবে আর-কোনাে এক বাসা―
মনের মধ্যে আঁকড়ে থাকে অসম্ভবের আশা।
অনেক গেছে ক্ষয় হয়ে তার, সবাই দিল ফাঁকি―
অল্প কিছু রয়েছে তার বাকি।
তাই দিয়ে সে তুলল বেঁধে ছােট্ট বােঝাটাকে,
জড়িয়ে কাঁথা আঁকড়ে নিল কাঁখে।
বাঁ হাতে এক ঝুলি আছে, ঝুলিয়ে নিয়ে চলে―
মাঝে মাঝে হাঁপিয়ে উঠে বসে ধূলির তলে।
সুধাই যবে কোন্ দেশেতে যাবে,
মুখে ক্ষণেক চায় সকরুণ ভাবে—
কয় সে দ্বিধায়, ‘কী জানি ভাই, হয়তাে আলম্‌ডাঙা,
হয়তাে সান্‌কিভাঙা,
কিংবা যাব পাটনা হয়ে কাশী।’
গ্রাম-সুবাদে কোন্‌কালে সে ছিল যে কার মাসি,
মণিলালের হয় দিদিমা, চুনিলালের মামি―
বলতে বলতে হঠাৎ সে যায় থামি,
স্মরণে কার নাম যে নাহি মেলে।
গভীর নিশাস ফেলে
চুপটি ক’রে ভাবে,
এমন করে আর কতদিন যাবে।
দূরদেশে তার আপন জনা, নিজেরই ঝঞ্ঝাটে
তাদের বেলা কাটে।
তারা এখন আর কি মনে রাখে
এতবড়ো অদরকারি তাকে।