পাতা:ছড়ার ছবি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

খাটুলি

একলা হােথায় বসে আছে, কেই বা জানে ওকে—
আপন-ভােলা সহজ তৃপ্তি রয়েছে ওর চোখে।
খাটুলিটা বাইরে এনে আঙিনাটার কোণে
টানছে তামাক বসে আপন-মনে।
মাথার উপর বটের ছায়া, পিছন দিকে নদী
বইছে নিরবধি।
আয়ােজনের বালাই নেইকো ঘরে,
আমের কাঠের নড়্ নড়ে এক তক্তপােষের ’পরে
মাঝখানেতে আছে কেবল পাতা
বিধবা তার মেয়ের হাতের শেলাই-করা কাঁথা।
নাৎনি গেছে, রাখে তারি পােষা ময়নাটাকে—
তেমনি কচি গলায় ওকে ‘দাদু’ ব’লেই ডাকে।
ছেলের গাঁথা ঘরের দেয়াল, চিহ্ন আছে তারি
রঙিন মাটি দিয়ে আঁকা সিপাই সারি সারি।
সেই ছেলেটাই তালুকদারের সর্দারি পক্ষ পয়ে
জেলখানাতে মরছে পচে দাঙ্গা করতে যেয়ে।
দুঃখ অনেক পেয়েছে ও, হয়তাে ডুবছে নােয়,
হয়তাে ক্ষতি হয়ে গেছে তিসির বেচা-কেনায়।
বাইরে দারিদ্র্যের
কাটা-ছেঁড়ার আঁচড় লাগে ঢের,
তবুও তার ভিতর-মনে দাগ পড়ে না বেশি,
প্রাণটা যেমন কঠিন তেমনি কঠিন মাংসপেশী ।

১৫