পাতা:ছড়ার ছবি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বারে বারে ঘটি ভ’রে জল তুলে কেউ আনে,
কেউ চলেছে কাঠের খোঁজে আম-বাগানের পানে।
হাঁসের ডিমের সন্ধানে কেউ গেল গাঁয়ের মাঝে,
তিন কন্যা লেগে গেল রান্না-করার কাজে।
গাঁঠ-পাকানাে শিকড়েতে মাথাটা তার থুয়ে
কেউ পড়ে যায় গল্পের বই জামের তলায় শুয়ে।
সকল-কর্ম-ভােলা
দিনটা যেন ছুটির নৌকা বাঁধন-রশি-খােলা
চলে যাচ্ছে আপনি ভেসে সে কোন্ আঘাটায়
যথেচ্ছ ভাঁটায়।
মানুষ যখন পাকা ক’রে প্রাচীর তােলে নাই,
মাঠে বনে শৈলগুহায় যখন তাহার ঠাঁই,
সেইদিনকার আল্‌গা-বিধির-বাইরে-ঘােরা প্রাণ
মাঝে মাঝে রক্তে আজও লাগায় মন্ত্রগান।
সেইদিনকার যথেচ্ছ-রস আস্বাদনের খোঁজে
মিলেছিলেম অবেলাতে অনিয়মের ভােজে।
কারাে কোনো স্বত্বদাবীর নেই যেখানে চিহ্ন,
যেখানে এই ধরাতলের সহজদাক্ষিণ্য,
হালকা সাদা মেঘের নীচে পুরানো সেই ঘাসে,
একটা দিনের পরিচিত আম-বাগানের পাশে,
মাঠের ধারে, অনভ্যাসের সেবার কাজে খেটে
কেমন ক’রে কয়টা প্রহর কোথায় গেল কেটে।
সমস্ত দিন ডাকল ঘুঘু দুটি,
আশে পাশে এঁটোর লােভে কাক এল সব জুটি,
গাঁয়ের থেকে কুকুর এল, লড়াই গেল বেধে−
একটা তাদের পালালাে তার পরাভবের খেদে।

৩০