পাতা:ছড়ার ছবি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সাত গলি সে পেরিয়ে শেষে একটা এঁধােঘরে
বসিয়ে আমায় রেখে দিল খড়ের আঁঠির ’পরে।
চোদ্দ আনা পয়সা আছে পকেট দেখি ঝেড়ে,
কেঁদে কইলাম, ‘ও পাঁড়েজি, এই নিয়ে দাও ছেড়ে।’
গুণ্ডা বলে, ‘ওটা নেব, ওটা ভালাে দ্রব্যই,
আরাে নেব চারটি হাজার নয়শাে নিরেনব্বই—
তার উপরে আর দু আনা। খুড়িটা তাে মরবে,
টাকার বোঝা বয়ে সে কি বৈতরণী তরবে?
দেয় যদি তো দিক চুকিয়ে, নইলে-’ পাকিয়ে চোখ
যে ভঙ্গিটা দেখিয়ে দিলে সেটা মারাত্মক।


এমন সময়, ভাগ্যি ভালাে, গুণ্ডাজির এক ভাগ্নি—
মূর্তিটা তার রণচণ্ডী, যেন সে রায়বাঘ্‌নি—
আমার মরণদশার মধ্যে হলেন সমাগত
দাবানলের উর্ধ্বে যেন কালাে মেঘের মতাে।
রাত্তিরে কাল ঘরে আমার উঁকি মারল বুঝি,
যেমনি দেখা অমনি আমি রইনু চক্ষু বুজি।


পরের দিনে পাশের ঘরে, কী গলা তার বাপ,
মামার সঙ্গে ঠাণ্ডা ভাষায় নয় সে বাক্যালাপ।
বলছে, ‘তােমার মরণ হয় না, কাহার বাছনি ও,
পাপের বােঝা বাড়িয়ো না আর, ঘরে ফেরৎ দিয়ো—
আহা, এমন সােনার টুকরাে—’। শুনে আগুন মামা;
বিশ্রী রকম গাল দিয়ে কয়, ‘মিহি সুরটা থামা।’
এ’কেই বলে মিহি সুর কি, আমি ভাবছি শুনে।
দিন তাে গেল কোনােমতে কড়ি বর্‌গা গুনে।

৩৫