পাতা:ছড়ার ছবি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সামরু যখন ছােটো ছিল পালােয়ানের পেশা
ইচ্ছা করেছিল নিতে, ঐ ছিল তার নেশা।
খবর পেল, নবাববাড়ি কুস্তিগিরের দল
পাল্লা দেবে— সামরু শুনে অসহ্য চঞ্চল।
বাপকে ব’লে গেল ছেলে, ‘কথা দিচ্ছি শােনো,
এক হপ্তার বেশি দেরি হবে না কখ্খােনো!’
ফিরে এসে দেখতে পেলে, সুধিয়া তার গাই
শেঠ নিয়েছে ছলে-বলে, গােয়ালঘরে নাই।
যেমনি শােনা অমনি ছুটল, ভোজালি তার হাতে,
দুনিচাঁদের গদি যেথায় নাজির-মহল্লাতে।
‘কী রে সামরু, ব্যাপারটা কী’ শেঠজি শুধায় তাকে।
সামরু বলে ‘ফিরিয়ে নিতে এলুম সুধিয়াকে।’
শেঠ বললে, ‘পাগল নাকি, ফিরিয়ে দেব তােরে,
পরশু ওকে নিয়ে এলুম ডিক্রিজারি করে।
‘সুধিয়া রে' ‘সুধিয়া রে’ সামরু দিল হাঁক,
পাড়ার আকাশ পেরিয়ে গেল বজ্রমন্দ্র ডাক।
চেনা সুরের হাম্বা ধ্বনি কোথায় জেগে উঠে,
দড়ি ছিঁড়ে সুধিয়া ঐ হঠাৎ এল ছুটে।
দু চোখ বেয়ে ঝরছে বারি, অঙ্গটি তার রােগা,
অন্নপানে দেয় নি সে মুখ, অনশনে-ভােগা।
সামরু ধরল জড়িয়ে গলা, বললে, ‘নাই রে ভয়,
আমি থাকতে দেখব এখন কে তােরে আর লয়।—
তােমার টাকায় দুনিয়া কেনা, শেঠ দুনিচাঁদ, তবু
এই সুধিয়া একলা নিজের, আর কারাে নয় কভু।
আপন ইচ্ছামতে যদি তােমার ঘরে থাকে
তবে আমি এই মুহূর্তে রেখে যাব তাকে।’

৫৭