পাতা:ছড়া-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছড়া

খোকা গেছে মোষ চরাতে, খেতে গেছে ভুলে—
কোথায় গেল গমের রুটি শিকের ’পরে তুলে।
আমার ছড়া চলেছে আজ রূপকথাটা ঘেঁষে,
কলম আমার বেরিয়ে এল বহুরূপীর বেশে।
আমরা আছি হাজার বছর ঘুমের ঘোরের গাঁয়ে,
আমরা ভেসে বেড়াই স্রোতের শেওলা-ঘেরা নায়ে।
কচি কুমডোর ঝোল রাঁধা হয়, জোড়-পুতুলের বিয়ে,
বাঁধা বুলি ফুকরে ওঠে কমলাপুলির টিয়ে।
ছাইয়ের গাদায় ঘুমিয়ে থাকে পাড়ার খেঁকি কুকুর,
পান্তিহাটে বেতোঘোড়া চলে টুকুর টুকুর।
তালগাছেতে হুতোম‍্থুমো পাকিয়ে আছে ভুরু,
তক্তিমালা হড়মবিবির গলাতে সাত-পুরু।
আধেক জাগায় আধেক ঘুমে ঘুলিয়ে আছে হাওয়া,
দিনের রাতের সীমানাটা পেঁচোয়-দানোয়-পাওয়া।
ভাগ্যলিখন ঝাপসা কালির নয় সে পরিষ্কার,
দুঃখসুখের ভাঙা বেড়ায় সমান যে দুই ধার।
কামারহাটার কঁকুড়গাছির ইতিহাসের টুকরো,
ভেসে চলে ভাঁটার জলে উইয়ে-ঘুনে-ফুকরো।
অঘটন তো নিত্য ঘটে রাস্তা-ঘাটে চলতে—
লোকে বলে, সত্যি নাকি— ঘুমোয় বলতে বলতে।

৩৬