পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছন্দের হসন্ত হলন্ত
৭৭

ব্যবহার করাও চলে না। প্রবোধচন্দ্র ‘বিচিত্রা’য়[১] লিখেছেন যে, বাঙালি কবিরা সাহস করে কবিতায় ‘করিব’ ‘চলিব’ প্রভৃতি প্রয়োগ না করে কেন ‘করব’ ‘চলব’ প্রয়োগ না করেন। যদি প্রশ্নটার অর্থ এই হয় যে, অযথাস্থানে কেন করিনে তবে তার উত্তর দেওয়া অনাবশ্যক। যদি বলেন যথাস্থানেও কেন করিনে তবে তার উত্তরে বলব, যথাস্থানে করে থাকি।

 যে তর্ক নিয়ে লেখা শুরু করেছিলেম সেটাতে ফিরে আসা যাক। বাংলায় হসন্তমধ্য শব্দগুলোয় কয় মাত্রা গণনা করা হবে তাই নিয়ে সংশয় উঠেছে।

 [সংস্কৃত ভাষায় শব্দের মাঝখানে হসন্তবর্ণ যুক্তবর্ণের রূপ ধরে সাধুভাষায় অনায়াসেই আপন স্থান পেয়েছে। একমাত্র খণ্ড-ৎ অক্ষরমহলে আপন অনুবর্তী জুড়ির সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। প্রাকৃত-বাংলায় শব্দমধ্যবর্তী হসন্তবর্ণ আপন বিচ্ছিন্ন অক্ষররূপ রক্ষা করে রয়ে গেছে। তার অধিকাংশই ক্রিয়াপদ।]

 যেগুলি ক্রিয়াপদ নয় সে সম্বন্ধে আমার বক্তব্য এ-প্রবন্ধের গোড়াতেই আলোচনা করেছি। বলেছি নিয়মের বিকল্প চলে; কেননা বাঙালির কান সাধারণ ব্যবহারে সেই বিকল্প মঞ্জুর করেছে। এ-ক্ষেত্রে হিসাবে একটা মাত্রার কমিবেশি নিয়ে তর্ক ওঠে না।

চিমনি ভেঙে গেছে দেখে গিন্নি রেগে খুন,
ঝি বলে আমার দোষ নেই ঠাকরুন।

অন্তত ‘চিমনি’কে দুই মাত্রা করায় কবির দোষ হয়নি। আবার

চিমনি ফেটেছে দেখে গৃহিণী সরোষ,
ঝি বলে ঠাকরুন মোর নাই কোনো দোষ।

এ রকম বিপর্যয়ও চলে। একই ছড়ায় ‘চিমনি’কে একমাত্রা গ্রেসমার্কা দেওয়া হয়েছে, অথচ ‘ঠাকরুন’কে খর্ব করে তিনমাত্রায় নামানো গেল। অপরাধ ঘটেছে বলে মনে করিনি।

  1. ১৩৩৮ অগ্রহায়ণ, পৃ ৫৭৪-৭৫।