পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছন্দের হসন্ত হলন্ত
৭৯

নন-কো-অপরেশনের দিনেও ইংরেজি শব্দ চালিয়ে দিতে পিকেটিঙের ভয় নেই। যথা—

আইডিয়াল নিয়ে থাকে, নাহি চড়ে হাঁড়ি,
প্র্যাকটিক্যাল লোকে বলে, এ যে বাড়াবাড়ি।
শিবনেত্র হল বুঝি, এইবার মোলো,
অকসিজেন নাকে দিয়ে চাঙ্গা করে তোলো।

কিন্তু সংস্কৃত-বাংলায় বাছবিচার খুব কড়া। আধুনিকদের হাতে পড়ে ম্লেচ্ছপনা কিছুকিছু সয়ে গেছে; কিন্তু সেটুকু বড়োজোর বাইরের রোয়াকে, ভিতরমহলে রীতরক্ষা সম্বন্ধে কষাকষি।

কর্ণে দিলা ঝুমকাফুল, নাসিকায় নথ,
অঙ্গসজ্জা-সমাধানে ভূরি মেহম্নত।

এটাকে প্রহসন বলে পাঠক হয়তো মাপ করতে পারেন, কিন্তু প্রাকৃতবাংলায় এই রকম ভিন্নপর্যায়ের শব্দগুলো যখন কাছাকাছি বসানো যায় তাদের আওয়াজের মধ্যে অত্যন্ত বেশি বেমিল হয় না। আমার এই গদ্য প্রবন্ধ পড়ে দেখলে পাঠকেরা সেটা লক্ষ্য করতে পারবেন। কিন্তু এটাও দেখে থাকবেন এটার মধ্যে ‘করিব’ ‘করিয়াছে’ ‘করিয়াছিল’ প্রভৃতি ক্রিয়ারূপ কলমের কোনো ভুলে ঢুকে পড়বার কোনো সম্ভাবনা নেই। সেইজন্যে আমরা বাংলায় সংস্কৃতে ও প্রাকৃতে দুই ভিন্ন নিয়মেই চলি, তার অন্যথা করা অসম্ভব। তাই বাংলাকাব্যে এই দুই ভাষার ধারায় ছন্দের রীতি যদি দুই ভিন্ন পথ নিয়ে থাকে তবে সেই আপত্তিতে শুদ্ধির গোময়লেপনে সমস্ত একাকার করবার পক্ষপাতী আমি নই। আমি বলি, দ্বৌ কর্তব্যৌ। কারণ ছন্দের এই দ্বিবিধরসেই আমার রসনার লোভ।

 পরিচয়—১৩৩৮ মাঘ