সংস্কৃত-বাংলা ও প্রাকৃত-বাংলার ছন্দ
সংস্কৃত-বাংলা এবং প্রাকৃত-বাংলার গতিভঙ্গিতে একটা লয়ের তফাত আছে। তার প্রকৃত কারণ প্রাকৃত-বাংলার দেহতত্ত্বটা হসন্তের ছাঁচে, সংস্কৃত-বাংলার হলন্তের[১]র। অর্থাৎ উভয়ের ধ্বনিস্বভাবটা পরস্পরের উলটো। প্রাকৃত-বাংলা স্বরবর্ণের মধ্যস্থতা থেকে মুক্ত হয়ে পদে পদে তার ব্যঞ্জনধ্বনিগুলোকে আঁট করে তোলে। সুতরাং তার ছন্দের বুনানি সমতল নয়, তা তরঙ্গিত। সোজা লাইনের সুতো ধরে বিশেষ কোনো প্রাকৃত-বাংলার ছন্দকে মাপলে হয়তো বিশেষ কোনো সংস্কৃত-বাংলার ছন্দের সঙ্গে সে বহরে সমান হতে পারে, কিন্তু সুতোর মাপকে কি আদর্শ বলে ধরা যায়।
মনে করা যাক রাজমিস্ত্রি দেয়াল বানাচ্ছে, ওলনদণ্ড ঝুলিয়ে দেখা গেল সেটা হল বার ফিট। কিন্তু মোটের উপর দেয়াল খাড়া দাঁড়িয়ে থাকলেও সেটার উপরিতল যদি ঢেউখেলানো হয়, তবে কারুবিচারে সেই তরঙ্গিত ভঙ্গিটাই বিশেষ আখ্যা পেয়ে থাকে। দৃষ্টান্তের সাহায্য নেওয়া যাক।
‘বউ কথা কও, বউ কথা কও’
যতই গায় সে পাখি,
নিজের কথাই কুঞ্জবনের
সব কথা দেয় ঢাকি।
খাড়া সুতোর মাপে দাঁড়ায় এই
১ ২ ১ ২ ১ ২ ১ ২
বউ ক | থা কও | বউ ক | থা কও
১ ২ ১ ২ ১ ২
য তই | গায় সে | পা খি,
- ↑ ৫২ পৃষ্ঠায় পাদটীকা ১ দ্রষ্টব্য।