পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সহকারে বিচার করলে সে ঐক্যের সন্ধান পাওয়া যায়। গ্রন্থসম্পাদনাকালে সে দিকেই সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি রাখা হয়েছে। আমার বিশ্বাস পৃথিবীর আর কোনো দেশেই রবীন্দ্রনাথের মতো ছন্দস্রষ্টার আবির্ভাব হয়নি। এ হেন মহাছন্দশিল্পীর ছন্দবিশ্লেষণ যে পরম শ্রদ্ধার সহিত বিবেচনীয় তাতে সন্দেহ নেই। তথাপি ছন্দবিচারের ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে মতভেদ ঘটা অসম্ভব নয়। পরমরবীন্দ্রানুরাগী জে. ডি. এণ্ডারসন এবং কবি সত্যেন্দ্রনাথকেও এ-রকম মতভেদের সম্মুখীন হতে হয়েছিল।

 এসব কারণে ‘ছন্দ’ গ্রন্থখানি সম্পাদন করা ও পাঠকের কাছে সুগম করা সহজসাধ্য নয়। তথাপি চেষ্টার ত্রুটি করা হয়নি। বহুসংখ্যক পাদটীকা এবং সুবিস্তৃত গ্রন্থপরিচয় ও নির্দেশিকার সাহায্যে বইখানিকে স্বরূপে প্রতিষ্ঠিত করার এবং জিজ্ঞাসু পাঠকের অধিগম্য করার যথাসাধ্য প্রয়াস করা হয়েছে। এই উদ্দেশ্যে প্রধানতঃ দুটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখা হয়েছে।

 এক, পরিভাষা। ছন্দবিশ্লেষণ করা উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথকে বহু পারিভাষিক, অর্ধপারিভাষিক ও অপারিভাষিক শব্দের প্রয়োগ করতে হয়েছে। অনেকগুলি পরিভাষাই তাঁর স্বকৃত। কিন্তু এগুলি সর্বত্র সমভাবে একই অর্থে প্রযুক্ত হয়নি। তা ছাড়া, একই অর্থ বোঝাতে বিভিন্ন শব্দের প্রয়োগও দেখা যায়। এসব কারণে তাঁর মূল অভিপ্রায়টি পাঠকের কাছে অনেকাংশে প্রচ্ছন্ন থেকে যায়। এই অস্পষ্টতা ও বিভিন্নার্থকতা থেকে মুক্ত করে তাঁর অভিপ্রায়কে সুব্যক্ত করার প্রয়াস করা হয়েছে পাদটীকায় ও ‘সংজ্ঞাপরিচয়’ বিভাগে। নির্দেশিকার অন্তর্গত ‘পরিভাষা’ অংশ এবং উক্ত ‘সংজ্ঞাপরিচয়’-এর সহায়তা নিয়ে অনুধাবন করলে রবীন্দ্রনাথের ছন্দতত্ত্বের স্বরূপ উপলব্ধি করা সহজ হবে বলে আশা করি। রবীন্দ্রনাথের পরিভাষা ও ছন্দোনীতির