পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছন্দের মাত্রা
৯৫

‘পোহাল’ শব্দে তিনমাত্রার একটা পঙ্গু পর্বাঙ্গ, তার পরে পুরো যতি। অর্থাৎ এ-ছন্দে ছয়মাত্রারই প্রাধান্য। এর ধড়টা ছয়মাত্রার, ল্যাজটা তিনমাত্রার। চোখ দিয়ে এক পংক্তিতে নয়মাত্রা দেখা যাচ্ছে বটে, কিন্তু অমূল্যবাবুর মতে কান দিয়ে দেখলে ওর দুটো অসমান ভাগ বেরিয়ে পড়ে।

 এর থেকে বোঝা যাচ্ছে আমার অঙ্কবিদ্যায় আমি যে-সংখ্যাকে ‘নয়’ বলি অমূল্যবাবুর অঙ্কশাস্ত্রেও তাকেই ‘নয়’ বলে বটে, কিন্তু ছন্দের মাত্রানির্ণয় সম্বন্ধে তাঁর পদ্ধতির সঙ্গে আমার পদ্ধতির মূলেই প্রভেদ আছে। কথাটা পরিষ্কার করে নেওয়া ভালো।

 পৃথিবী চলছে, তার একটা ছন্দ আছে। অর্থাৎ তার গতিকে মাত্রাসংখ্যায় ভাগ করা যায়। এই ছন্দের পূর্ণায়তনকে নির্ণয় করব কোন্ লক্ষণ মতে। পৃথিবী নিয়মিতকালে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। আমাদের পঞ্জিকা অনুসারে পয়লা বৈশাখ থেকে আরম্ভ করে চৈত্রসংক্রান্তিতে তার আবর্তনের এক পর্যায় শেষ হয়, তার পরে আবার সেই পরিমিতকালে পয়লা বৈশাখ থেকে পুনর্বার তার আবর্তন শুরু হয়। এই পুনরাবর্তনের দিকে লক্ষ্য করে আমরা বলতে পারি পৃথিবীর সূর্যপ্রদক্ষিণের মাত্রাসংখ্যা ৩৬৫ দিন।

মহাভারতের কথা অমৃতসমান
কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান্।

এই ছন্দের মাত্রাপথে পুনরাবর্তন আরম্ভ হয়েছে কোথায় সে তো জানা কথা। সেই অনুসারে সর্বজনে বলে থাকে এর মাত্রাসংখ্যা চোদ্দ। বলা বাহুল্য এই চোদ্দমাত্রা একটা অখণ্ড নিরেট পদার্থ নয়। এর মধ্যে জোড় দেখা যায়, সেই জোড় আটমাত্রার অবসানে, অর্থাৎ ‘মহাভারতের কথা’ একটুখানি দাঁড়িয়েছে যেখানে এসে। পয়ারে এই দাঁড়াবার আড্ডা