পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৮
ছন্দ

বারমাত্রায় তার চরমগতি, সেই তীর্থে এসে তবে সে খাড়া হয়ে থাকে। ঐ ‘বার’ সংখ্যাটা যেন বরের ঘরের পিসি কনের ঘরের মাসি, দুইয়ের সঙ্গেও তার যেমন কুটুম্বিতা তিনের সঙ্গেও তেমনি। তাই তিনমাত্রার ঝোঁকটা বারমাত্রায় এসে ঠাণ্ডা হবার সুযোগ পায়। ‘বিংশতি কোটি মানবের বাস’ পদটি বারমাত্রায় স্থির হয়েছে।]

 আলোচ্য নয়মাত্রার ছন্দে ‘তিন’ সংখ্যার অস্থিরতা শেষপর্যন্তই রয়ে গেছে। সেটা উচিত নয়, ছয়মাত্রার পরে থামবার একটুখানি অবকাশ দেওয়া ভালো, এমন তর্ক তোলা যেতে পারে। কিন্তু ছন্দের সিদ্ধান্ত তর্কে হয় না, ওটার মীমাংসা কানে। সৌভাগ্যক্রমে এ-সভায় সুযোগ পেয়েছি কানের দরবারে আরজি পেশ করবার। নয়মাত্রার চঞ্চল ভঙ্গিতে কান সায় দিচ্ছে না, এ-কথা যদি সুধীজন বলেন তাহলে অগত্যা চুপ করে যাব, কিন্তু তবুও নিজের কানের স্বীকৃতিকে অশ্রদ্ধা করতে পারব না।

 ‘আঁধার রজনী পোহাল’ কবিতাটি গানরূপে রচিত। সংগীতাচার্য ভীমরাও শাস্ত্রী[১] মৃদঙ্গের বোলে একে যে তালের রূপ দিয়েছিলেন তাতে দুটি আঘাত এবং একটি ফাঁক। যথা—

  
আঁধার | রজনী | পোহাল।

এ কথা সকলেরই জানা আছে যে, ফাঁকটা তালের শেষ ঝোঁক, তারপরে পুনরাবর্তন। এই গানের স্বাভাবিক ঝোঁক প্রত্যেক তিনমাত্রায় এবং এর তালের অর্থাৎ ছন্দের সম্পূর্ণতা তিনমাত্রাঘটিত তিন ভাগে। অমুল্যবাবু বা শৈলেন্দ্রবাবু[২] যদি অন্য কোনো রকমের ভাগ ইচ্ছা করেন

  1. বিশ্বভারতীর ভূতপূর্ব সংগীতশিক্ষক।
  2. শৈলেন্দ্রকুমার মল্লিক। তাঁর ‘ছন্দরণ’ প্রবন্ধ (বিচিত্রা, ১৩৩৯ শ্রাবণ) দ্রষ্টব্য।