পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছন্দের মাত্রা
৯৯

তবে রচয়িতার ইচ্ছার সঙ্গে তার ঐক্য হবে না, এর বেশি আমার আর কিছু বলবার নাই।

উত্তর দিগন্ত ব্যাপি দেবতাত্মা হিমাদ্রি বিরাজে,
দুই প্রান্তে দুই সিন্ধু, মানদণ্ড যেন তারি মাঝে।

এই ছন্দকে আঠারমাত্রা যখন বলি তখন সমগ্র পদের মাত্রাসংখ্যা গণনা করেই বলে থাকি। আট মাত্রার পরে এর একটা সুস্পষ্ট বিরাম আছে বলেই এর আঠার মাত্রার সীমানার বিরূদ্ধে নালিশ চলে না।

 আমাদের হাতে তিন পর্ব আছে। মণিবন্ধ পর্যন্ত এক, এটি ছোটো পর্ব, কনুই পর্যন্ত দুই, কনুই থেকে কাঁধ পর্যন্ত তিন; যাকে আমরা সমগ্র বাহু বলি সে এই তিনি পর্ব মিলিয়ে। আমাদের দেহে এক বাহু অন্য বাহুর অবিকল পুনরাবৃত্তি। প্রত্যেক ছন্দেরই এমনিতরো একটি সম্পূর্ণ রূপকল্প অর্থাৎ প্যাটার্‌ন্ আছে। ছন্দোবদ্ধ কাব্যে সেই প্যাটার্‌ন্‌কেই পুনঃপুনিত করে। সেই প্যাটার্‌নের সম্পূর্ণ সীমার মধ্যেই তার নানা পর্ব পর্বাঙ্গ প্রভৃতি যা-কিছু। সেই সমগ্র প্যাটার্‌নের মাত্রাই সেই ছন্দের মাত্রা। ‘আঁধার রজনী পোহাল’ গানটিকে এইজন্যেই নয়মাত্রার বলেছি। যেহেতু প্রত্যেক নয়মাত্রাকে নিয়েই তার পুনঃপুনঃ আবর্তন।

 কোন্ ছত্র কী রকম ভাগ করে পড়তে হবে, এ নিয়ে মতান্তর হওয়া অসম্ভব নয়। পুরাতন ছন্দগুলির নাম অনুসারে সংজ্ঞা আছে। নতুন ছন্দের নামকরণ হয়নি। এইজন্যে তার আবৃত্তির কোনো নিশ্চিত নির্দেশ নেই। কবির কল্পনা এবং পাঠকের রুচিতে যদি অনৈক্য হয় তবে কোনো আইন নেই যা নিয়ে নালিশ চলতে পারে। বর্তমান প্রসঙ্গে আমার বক্তব্য এই যে, আমি যখন স্পষ্টতই আমার কোনো কাব্যের ছন্দকে নয়মাত্রার বলছি তখন সেটা অনুসরণ করাই বিহিত। হতে পারে তাতে কানের তৃপ্তি হবে না। না যদি হয় তবে সে দায় কবির।