পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২০
ছন্দ

রিমিঝিমি বরিষে শ্রাবণধারা
ঝিল্লি ঝনকিছে ঝিনি ঝিনি;
দুরু দুরু হৃদয়ে বিরামহারা
তাকায়ে পথপানে বিরহিণী।

এ-ছন্দেরও অবয়ব চব্বিশ মাত্রায়। কিন্তু এর গড়ন স্বতন্ত্র; এর অংশগুলি দুই-তিনের মিশ্রিত মাত্রা।

 পয়ার ছন্দের বিশেষ গুণ এই যে, তার বুনোনি ঠাসবুনোনি নয়, তাকে বাড়ানো-কমানো[১] যায়। সুর করে টেনে টেনে পড়বার সময়, কেউ যদি যতির যোগে পয়ারের প্রথম ভাগে দশ ও শেষ ভাগে আট মাত্রা পড়ে তবু পয়ারের প্রকৃতি বজায় থাকে। যেমন—

মহাভারতের কথা • • | অমৃত-সমান • •
কাশীরাম দাস ভণে • • | শুনে পুণ্যবান্ • •।

অথবা

মহা • • ভারতের কথা • •| অমৃত • • সমা • •ন।
কাশীরা • • ম দাস ভণে • •| শুনে • • পুণ্যবা • • ন্।

পয়ার ছন্দ স্থিতিস্থাপক বলেই এটা সম্ভব, আর সেই গুণেই বাংলা কাব্যসাহিত্যকে সে এমন করে অধিকার করেছে।

[যাকে ‘মহাপয়ার’ নাম দেওয়া যায় সেটা পয়ারশ্রেণীর সবচেয়ে প্রশস্ত ছন্দ। সেই ছন্দ আমার পূজনীয় অগ্রজ দ্বিজেন্দ্রনাথের সৃষ্টি। আঠার মাত্রায় এর অবয়ব, এর প্রত্যেক পংক্তির প্রথম ভাগে আট মাত্রা, দ্বিতীয় ভাগে দশ মাত্রা। তাঁরি কাব্য থেকে দৃষ্টান্ত দেখাই।

গম্ভীর পাতাল যথা কালরাত্রি করালবদনা
বিস্তারে একাধিপত্য, শ্বসয়ে অযুত ফণিফণা

  1. ৫৫ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।