পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চলতিভাষার ছন্দ
১৩৯

লাগে। চলতিভাষার ছন্দ সেই যুক্তবর্ণের ছন্দ। উপরের ঐ কবিতাকে সাধুভাষার ছন্দে ঢালাই করলে তার চেহারা হয় নিম্নলিখিত মতো।

অচিনের ডাকে নদীটির বাঁকে
ডাক যেন শোনা যায়।
কলহীন পাড়ি থামিতে না পারি,
নিশিদিন ধারা ধায়।
সে ধারার টানে তরীখানি চলে,
সেই ডাক শুনে মন মোর টলে,
এই টানাটানি ঘুচাও জগার,
হয়েছে বিষম দায়।

যদি উচ্চারণ মেনে বানান করা যেত তাহলে বাউলের গানের চেহারা হত

অচিণ্ডাকে নদীবাঁকে ডাক্‌বে শোনা যায়।

 সাধুভাষার কবিতায় বাংলাশব্দের হসন্তরীতি যে মানা হয়নি তা নয়, কিন্তু তাদের পরস্পরকে ঠোকাঠুকি ঘেঁষাঘেঁষি করতে দেওয়া হয় না। বাউলের গানে আছে ‘ডাকের চোটে মন যে টলে’। এখানে ‘ডাকের’ আর ‘চোটে, ‘মন’ আর ‘যে’ এদের মধ্যে উচ্চারণের কোনো ফাঁক থাকে না। কিন্তু সাধুভাষার গানে ‘মন’ আর ‘মোর’ হসন্ত শব্দ হলেও হসন্ত শব্দের স্বভাব রক্ষা করে না, সন্ধির নিয়মে পরস্পর এঁটে যায় না।

 বাংলাভাষার সবচেয়ে পুরোনো ছন্দ পয়ারের ছাঁদের, অর্থাৎ ‘দুই’ সংখ্যার ওজনে। যেমন—

খনা ডেকে বলে যান
রোদে ধান ছায়ায় পান।
দিনে রোজ রাতে জল
তাতে বাড়ে ধানের বল।