বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫০
ছন্দ

 জ্ঞানের বিষয়কে প্রাঞ্জল ও যথার্থ করে ব্যক্ত করতে হলেও প্রকাশের উপাদানকে আঁট করে তাকে ঠিকমতো শ্রেণীবদ্ধ করা চাই। সে তাকে প্রাণের বেগ দেবার জন্যে নয়, তাকে প্রকৃষ্ট অর্থ দেবার জন্যেই। শংকরের বেদান্তভাষ্য তার একটি নিদর্শন। তার প্রত্যেক শব্দই সার্থক, তার কোনো অংশেই বাহুল্য নেই, তাই তত্ত্বব্যাখ্যা সম্বন্ধে তা এমন সুস্পষ্ট। কিন্তু এই শব্দযোজনার সংযমটি যৌক্তিকতার সংযম, আর্থিক যাথাতথ্যের সংযম, শব্দগুলি লজিক-সংগত পংক্তিবন্ধনে সুপ্রতিষ্ঠিত। কিন্তু শংকরাচার্যের নামে যে সৌন্দর্যলহরী[] কাব্য প্রচলিত তার ভাবের প্রকাশ লজিকের পক্ষ থেকে অসংযত, অথচ প্রাণবান্ গতিমান্ রূপসৃষ্টির পক্ষ থেকে তার কলাকৌশল দেখতে পাই।

বহন্তী সিন্দূরং প্রবলকবরীভারতিমির—
দ্বিষাং বৃন্দৈর্বন্দীকৃতমিব নবীনার্ককিরণম্।
তনোতু ক্ষেমং নস্তব বদনসৌন্দর্যলহরী—
পরীবাহস্রোতঃসরণিরিব সীমন্তসরণিঃ।[]

 ঐ সিঁথির রেখা আমাদের কল্যাণ দিক যে-রেখাটি তোমার মুখসৌন্দর্যধারার স্রোতঃপথের মতো। আর যে-সিঁদুর আঁকা রয়েছে তোমার ঐ সিঁথিতে, সে যেন নবীন সূর্যের আলো, তাকে ঘনকবরীভারের অন্ধকার শত্রু হয়ে বন্দী করে রেখেছে।

 সৌন্দর্যলহরীতে[] যে নারীরূপের কথা পাই সে সাধারণ নারী নয়, সে বিশ্বসৌন্দর্যের প্রতিমা। নিয়ত বয়ে চলেছে তার সৌন্দর্যের প্রবাহ, পিছনে তার ঘনকবরীপুঞ্জে রাত্রি, সম্মুখে তার সীমান্তরেখার সিন্দুররাগে

  1. বঙ্গশ্রী ও প্রথম সংস্করণের পাঠে আছে ‘আনন্দলহরী’, পাণ্ডুলিপিতেও তাই।
  2. সৌন্দর্যলহরী, ৪৪সংখ্যক শ্লোক (শংকরাচার্যের গ্রন্থাবলীর বাণীবিলাস স্মৃতিসংস্করণে এই শ্লোকটির প্রথমার্ধ দ্বিতীয়ার্ধের পরে আছে; সপ্তদশ খণ্ড পৃ ১৩৬)। শিখরিণী ছন্দ। দ্রষ্টব্য: পৃ ১২৩ পাদটীকা ১, পৃ ১৩৫ পাদটীকা ১।
  3. বঙ্গশ্রী ও প্রথম সংস্করণের পাঠে আছে ‘আনন্দলহরী’, কিন্তু পাণ্ডুলিপিতে ‘সৌন্দর্যলহরী’।